ইসির হাত অনেক লম্বা, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সুজনের সংবাদ সম্মেলন। ১৯ নভেম্বর, জাতীয় প্রেসক্লাব। ছবি: সাজিদ হোসেন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সুজনের সংবাদ সম্মেলন। ১৯ নভেম্বর, জাতীয় প্রেসক্লাব। ছবি: সাজিদ হোসেন

‘আমাদের এই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি বিতর্কিত নির্বাচন হয় তাহলে তরুণেরা আশাহত হবে। তরুণেরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে যেতে পারে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি তাঁরা আস্থা হারাতে পারে। তাই এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এতে বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাত অনেক লম্বা। উচ্চ আদালতের রায়ে ইসির অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনে নীতিনির্ধারণে সংযোজনও করতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের খাতিরে ইসির বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা আছে, সে ক্ষমতা শুধু ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য নয়। আমাদের আশা, ইসি তার দায়িত্ব সঠিক ও কঠোরভাবে পালন করবে।’

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ১২ হাজারের অধিক মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বদিউল আলম বলেন, ‘প্রার্থীর সংখ্যা যত বেশি হবে, তত যোগ্য প্রার্থী পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আমরা আশা করি ৩০০ আসনে যোগ্য প্রার্থী পাব। যারা অবাঞ্ছিত, তারা যেন মনোনয়ন না পায় এবং যারা জনকল্যাণ নিবেদিত ব্যক্তি, তারা যেন মনোনয়ন পায়।’

সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে কোনো সংশয় আছে কি না? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে বদিউল আলম বলেন, ‘সংশয় তো অবশ্যই আছে, সবারই আছে। আমরা সবাই চাই একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হোক। ওই সংশয় যেন অমূলক হয়, সে জন্যই আমরা আহ্বান করেছি, নির্বাচনে চ্যালেঞ্জগুলো উত্থাপন করেছি। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। যেমন, রংপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আমাদের দাবি ইসি যেন দায়বদ্ধতা থেকে ভূমিকা পালন করে।’

সুজন সম্পাদক আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আরেকটি সংশয় হলো সংসদ বহাল আছে, দুর্ভাগ্য হলো অনেক সংসদ সদস্য স্থানীয়ভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁরা যেন নির্বাচনকে অযাচিতভাবে প্রভাবিত না করতে পারেন, সে ব্যাপারেও ইসিকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। মোটাদাগে সংশয় এগুলোই।’

দুর্নীতিবাজ ও বিভিন্ন অভিযোগ আছে এমন মনোনয়নপ্রার্থীদের ব্যাপারে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হলো সঠিক ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া। অতীতের মতো যারা মনোনয়ন পাবে, তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আমরা আলোচনা করব। বিগত নির্বাচনের পর মন্ত্রী, সাংসদদের বৈশিষ্ট্য, তাদের ব্যাপারে কী কী অভিযোগ, সম্পদ কত বাড়ল, এগুলো নিয়ে আমরা তথ্য হাজির করব।’

এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো প্যানেল গঠন করে প্রার্থী বাছাই করছে না বলে অভিযোগ করেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আইনে আছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে প্রতিটি কনস্টিটিউয়েন্সিতে (নির্বাচনী এলাকা) প্যানেল হওয়ার কথা। ২০০৮-এ কিছু কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগ প্যানেল করেছিল এবং বিএনপি উপেক্ষা করেছিল। এবার কেউ প্যানেল গঠন করেনি। ২০০৯ তে এ-সংক্রান্ত আইনটি সংসদে অনুমোদন হয়। মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্যানেল থেকে মতামত বিবেচনায় নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে এবার প্যানেল হচ্ছে বলে দৃশ্যমান কোনো তথ্য নেই। এর মাঝে রাজনৈতিক দলগুলো আইন মেনে মনোনয়ন দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

জাতীয় নির্বাচনে সাংবাদিকেরা কি তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? এমন প্রশ্নে বদিউল আলম বলেন, ‘গণমাধ্যমের কর্মীরা নির্বাচন কমিশনের জন্য সহায়ক শক্তি হতে পারেন। আমি যতদূর দেখেছি, সাংবাদিকেরা সব সময়ই সংবাদ ও তথ্য সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছে। যেসব বিধিনিষেধ আছে, সেগুলো দূর করে সাংবাদিকেরা যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে এবং ইসি যেন অযাচিত বাধা হিসেবে নির্দেশগুলো দূর করে, সেটাই আমাদের আশা।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবকিছুই ইসির কর্তৃত্বে চলে আসে। সংগত কারণেই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে ইসিকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে এ-ও সত্য, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা ইসির একক প্রচেষ্টায় কখনোই সম্ভব নয়। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও সমর্থক এবং ভোটারদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।’

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের ঢাকা মহানগর কমিটির সহসভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী এবং সুজনের কেন্দ্রীয় সহযোগী সমন্বয়কারী শামীমা মুক্তা উপস্থিত ছিলেন।