পরীক্ষাকেন্দ্রের বদলে লাশঘরে

বান্ধবীকে নিয়ে রিকশা করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমনা আক্তার। মাঝপথে তাদের বহনকারী রিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় টমটম গাড়ি। গুরুতর আহত অবস্থা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিবর্তে ১০ বছর বয়সী সুমনার ঠাঁই হয় হাসপাতালের লাশঘরে।

আজ সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের ওল্ড পোর্ট মার্কেটের সামনে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই রিকশায় থাকা আরেক পরীক্ষার্থী ফারজানা আক্তার বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে বাংলা পরীক্ষা ছিল।

চট্টগ্রাম নগরের বন্দরের ঘাসফুল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিল সুমনা আক্তার। সে পোর্ট কলোনির বাসিন্দা ও ট্রাকচালক মো. বাবর উদ্দিনের মেয়ে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় সুমনা। বাসা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হালিশহর মকবুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল।

গাড়িচাপায় মেয়ে সুমনা আক্তারের মৃত্যুসংবাদ শুনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন মা নাসিমা আক্তার। সঙ্গে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছিলেন। সবার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।

সোমবার বেলা ৩টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের লাশঘরের সামনে নির্বাক হয়ে বসে ছিলেন নাসিমা আক্তার। মাঝেমধ্যে ‘আমার মেয়ে কই’ বলতে বলতে বিলাপ শুরু করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘মা রে, তুই কেমনে চলে গেলি। তোকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকব। এখন আমাকে মা ডাকবে কে।’

মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতির কথা মনে পড়লেই আহাজারি শুরু করেন নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, সকালে পড়লে মেয়ের পড়া মনে থাকে। তাই ভোরেই ঘুম থেকে ডেকে দিয়েছিলেন। পড়া শেষ হলে স্নান করে আর ভাত খেয়ে বিদায় নেয়। ঘর থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়ের মৃত্যু হবে, তা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না তিনি। মেয়েকে নিয়ে তাঁর সব স্বপ্ন শেষ।

পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সুমনাদের রিকশা ঠিক করে দেন প্রতিবেশী জসিম উদ্দিন। তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সুমনার মৃত্যু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়েও এবার পরীক্ষা দিচ্ছে। নিজের মেয়ে ও সুমনাকে আলাদা আলাদা রিকশায় তুলে দিয়ে বাসায় চলে আসেন। কিছুক্ষণ পরেই গাড়ি চাপায় সুমনার আহত হওয়ার খবর শোনেন। এরপরই হাসপাতালে ছুটে আসেন। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।

চালক পলাতক। তবে টমটম গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে বলে বন্দর থানা-পুলিশ জানায়।