জরিনা খুনে জড়িত ছেলের বউ শারমিন ও জামাই নুর ইসলাম

শারমিনের মামা মো. স্বপন জরিনা খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
শারমিনের মামা মো. স্বপন জরিনা খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

শাশুড়ি জরিনা খাতুনকে খুন করার জন্য মামা স্বপনকে বিশ হাজার টাকা বিকাশ করেন শারমিন খাতুন।

৯ নভেম্বর আশুলিয়ায় খুন হওয়া শাশুড়ি জরিনা খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আজ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন শারমিন।

এর আগে গতকাল রোববার শারমিনের মামা মো. স্বপন জরিনা খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহজাহান ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, শারমিন আদালতে স্বীকার করেছেন যে, জরিনাকে যেদিন খুন করা হয় সেদিন সকালে জরিনার ছেলে রেজাউলের স্ত্রী শারমিন বিকাশের মাধ্যমে তাঁর মামাকে ২০ হাজার টাকা দেন। জরিনাদের আশুলিয়ায় যাওয়া আসার তথ্য মোবাইল ফোনে স্বপনকে জানায় শারমিন। শাশুড়ি খুনের সঙ্গে শারমিন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা জরিনা খাতুন তাঁর বাবা আকবর আলীকে নিয়ে গত ৯ নভেম্বর আশুলিয়ায় মেয়ে রোজিনার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তাঁরা আশুলিয়ার শিমুলিয়া থেকে একটি বাসে ওঠেন। পরে রাত ৮টার সময় জরিনার বাবা আকবর আলী জরিনার জামাই নুর ইসলামকে মোবাইল ফোনে জানান, বাসের চালক আর হেলপার তাঁকে মারধর করে নামাইয়া দিয়েছে। তাঁর মেয়ে জরিনাকে (নুর ইসলামের শাশুড়ি) বাসে করে নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে নুর ইসলাম এসে জরিনার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জরিনার জামাই নুর ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। থানা-পুলিশের হাতঘুরে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। তদন্তে উঠে আসে, জরিনার খুনের সঙ্গে জড়িত আছেন নুর ইসলাম, তাঁর মা আমেনা বেগম এবং স্বপন।

জরিনার দুই ছেলে, এক মেয়ে। তাঁর বড় ছেলে রেজাউল থাকেন বিদেশে। কয়েক বছর আগে রেজাউলের সঙ্গে স্বপনের ভাগনি শারমিনের বিয়ে হয়। স্বপনের মাধ্যমে বছর পাঁচেক আগে আশুলিয়ার নুর ইসলামের সঙ্গে মেয়ে রোজিনাকে বিয়ে দেন জরিনা।

তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান ভূঞা বলেন, বিয়ের পর থেকে নুর ইসলাম প্রায় জরিনার মেয়ে রোজিনাকে মারধর করত। মারধর করায় জরিনা তাঁর জামাই নুর ইসলামের কৈফিয়ত চাইতেন। মাঝেমধ্যে বকাঝকাও করতেন।

আসামি স্বপন আদালতে বলেছেন, জরিনার মেয়ে রোজিনাকে তিনি নুর ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। জরিনা প্রায়ই নুর ইসলামের বাড়িতে এসে ঝগড়াঝাঁটি করতেন। তখন উভয় পক্ষ তাঁকে ডাকত। জরিনাকে কোনো মতে থামানো যেত না। একদিন নুর ইসলামের মা আমেনা তাঁকে (স্বপন) বলেন, জরিনাকে শাস্তি দেওয়া দরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বপন বাস চালক সালাম এবং বাসের সহকারী রাজুর সঙ্গে কথা বলেন। সালামের সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়, বাসে তুলার পর জরিনাকে মারধর করে বাস থেকে নামাইয়া দেবে। বিনিময়ে নুর ইসলামের মা বাস চালক সালামকে ১০ হাজার টাকা দেবেন। ঘটনার দিন তাঁর সামনে আমেনা বাসচালক সালামকে ৫ হাজার টাকা দেন। ঘটনার দিন স্বপন ও নুর ইসলাম জরিনা ও তাঁর বাবা আকবর আলীকে বিকেলে আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসেন।

আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন, জরিনা খুনের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে জরিনার বৃদ্ধ বাবা আকবর আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুজনের বক্তব্যে গরমিল পাওয়া যায়।

তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, শারমিন তাঁর শাশুড়ি জরিনার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। কখন তাঁর শাশুড়ি আশুলিয়ায় যাচ্ছে সেই খবর শারমিন তাঁর মামা স্বপনকে টাইম টু টাইম জানায়।

পিবিআই উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, খুনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন বাসে কোনো যাত্রী ওঠানো হয়নি। আগে থেকে বাসটি শিমুলতলা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। জরিনা ও আকবর আলী ওঠার পর বিভিন্ন জায়গায় বাসটি ঘোরানো হয়। সন্ধ্যার দিকে প্রথমে আকবর আলীকে মারধর করে নামিয়ে দেওয়া হয়। জরিনাকে মারধর করে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ আশুলিয়ার মরাগাং বেড়িবাঁধের রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায়।

জরিনা খুনে সরাসরি জড়িত বাস চালক সালাম এবং রাজুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, যে কোনো সময় এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হবে।

মামলার অন্যতম আসামি নুর ইসলাম ও তাঁর মা আমেনা বেগম রিমান্ডে আছেন।