ফিরোজ রশীদের পাল্লা ভারী

কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু আহমেদ মন্নাফী, আশিকুর রহমান, আবুল হোসেন, গাজী আবু সাঈদ ও হেদায়েতুল ইসলাম
কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু আহমেদ মন্নাফী, আশিকুর রহমান, আবুল হোসেন, গাজী আবু সাঈদ ও হেদায়েতুল ইসলাম

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আটজন। তবে নির্বাচনের নানা সমীকরণে আসনটি মিত্র জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে পারে ক্ষমতাসীন দলটি। বর্তমানে জাতীয় পার্টির এক কেন্দ্রীয় নেতা এই আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

এদিকে এই আসন  জাতীয় পার্টিকে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের দাবি, অতীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আসনে নির্বাচন করেছেন। দলের ঐতিহ্য রক্ষায় এই আসনে তৃণমূলের কর্মীদের মূল্যায়ন করে তাঁদের মনোনয়ন দিতে হবে। এতে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়বে। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির ফিরোজ রশীদ সাংসদ হয়েছিলেন। তিনি এবারও নির্বাচন করতে আগ্রহী। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে কোনো ধারণা করা যাচ্ছে না। এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে তিনি কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় আছে।

সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী ও কোতোয়ালি থানার একাংশ নিয়ে ঢাকা-৬ আসন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়ার্ড আছে ১১টি। আসনটিতে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ।

একসময় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি ছিল। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত টানা চারবার সাংসদ হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকা। এরপর ২০০৮ সালে তাঁকে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিজানুর রহমান খান। ২০১৪ সালে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। সাংসদ পদে জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ফিরোজ রশীদ তাঁদের যথাযথ মূল্যায়ন করেননি। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টির তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দিলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি বাড়বে। তবে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতারা জানিয়েছেন, জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ থেকে এবারও কাজী ফিরোজ রশীদের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের মিত্র বা মহাজোটের একটি অংশ। তাই এ আসন থেকে আমাকে এবারও মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আশাবাদী।’ তিনি বলেন, এই আসনে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নকাজ করেছেন। আর তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কারও খারাপ সম্পর্ক বা দূরত্ব নেই। এই দলের সবাইকে নিয়েই তিনি কাজ করেছেন। স্থানীয় সবার সঙ্গেও তাঁর ভালো সম্পর্ক আছে।

আওয়ামী লীগের আটজন মাঠে

ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তারই অংশ হিসেবে আসনটিতে আট নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁদের মধ্যে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন ডিএসসিসির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে রাজপথে ছিলাম। রাজনীতির বেশির ভাগ সময় বৃহত্তর সূত্রাপুরে দলের নেতৃত্ব দিয়েছি। এখন তৃণমূলের সমর্থন দিয়ে দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।’

জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী দেওয়া প্রসঙ্গে আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যা নির্দেশনা দেবেন, তা-ই মেনে নেব।’

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র পেতে চেষ্টা করছেন ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন। ১০ নভেম্বর তাঁরা দুজন একসঙ্গেই দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আবার একই সঙ্গে তা জমা দিয়েছেন।

সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি  বলেন, নির্বাচনে তাঁকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ দেবে আওয়ামী লীগ, এমনটাই প্রত্যাশা।

এই চারজন ছাড়াও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক ও খেলোয়াড় সাইদুর রহমান প্যাটেল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদ উল্লাহ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।