জোটের হিসাব-নিকাশে ৩ আসন

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জিয়াউল হক মৃধা, ফয়জুর রহমান
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জিয়াউল হক মৃধা, ফয়জুর রহমান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্বাচনী আসন ছয়টি। এর মধ্যে তিনটি আসনে প্রার্থিতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের হিসাব-নিকাশ ও রূপরেখার ওপর নির্ভর করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে আসনগুলো হাতছাড়া করতে নারাজ আওয়ামী লীগের সাংসদ ও নেতা-কর্মীরা।

ওই তিনটি আসন হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর)। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-এর বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়জুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাংসদ। তাঁরা এ আসনগুলোতে এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে কখনোই জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থার জন্য কোন্দল আর প্রার্থীজটকেই দায়ী করা হয়। এবারও এই আসনে আওয়ামী লীগের ১৯ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে সাংগঠনিক শক্তি ও অতীতের ভোটের হিসাব অনুযায়ী, এই আসনে মূল রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এরপরও জোটের হিসাব-নিকাশ মেলাতে শরিক দলগুলোকে এই আসন বারবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এবারও এখানকার প্রার্থিতা আসন পুনর্বিন্যাস এবং জোটের ওপর নির্ভর করছে।

একইভাবে ১৯৭৩ সালের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনেও কখনো জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। এই আসন সব সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লুৎফুল হাই বিএনপির পাঁচবারের সাংসদ হারুন আল রশিদকে হারিয়ে সাংসদ হন। লুৎফুলের মৃত্যুর পর ২০১১ সালের উপনির্বাচনে ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সাংসদ হন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে তাঁকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের চারজন দলীয় মনোনয়ন কিনে জমা দিয়েছেন। তবে তাঁদের তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন না সাংসদ।

অপর দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ হন আবদুল কুদ্দুস মাখন। এর প্রায় দেড় যুগ পর ১৯৯৬ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে জয় এনে দেন প্রয়াত আবদুল লতিফ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি পান আওয়ামী লীগের ফয়জুর রহমান। বর্তমানে তিনিসহ এই আসনে ২৪ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের জোটের মনোনয়ন পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সাংসদ হন জাপার জিয়াউল হক মৃধা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে মনোনয়ন পান জিয়াউলের জামাতা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। পরে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে সাংসদ হন মোকতাদির চৌধুরী। এবার এই আসনে নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় আছেন প্রয়াত সাংসদ মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আমিনী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে সাবেক সাংসদ শাহ জিকরুল আহমেদ জাসদের একমাত্র প্রার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী আবুল হাসানাত জোটের মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে চান। জোটগত কারণে যদি তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে মনোনয়ন পান, তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে সাংসদ মোকতাদির চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নেবেন। অপর দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ থেকে জোটগত কারণে জাপার প্রার্থী মনোনয়ন না পেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনটি জাপা পাবে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩–এর যেকোনো একটি জাপা পেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ থেকে জাসদ মনোনয়ন পেতে পারে। আবুল হাসানাত যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ থেকে মনোনয়ন পান, তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে জাপা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ থেকে জাসদ অথবা জাপা মনোনয়ন পাবে। তবে আওয়ামী লীগের সাংসদ মোকতাদির চৌধুরী, ফয়জুর রহমান ও জাপার সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। সাবেক সাংসদ শাহ জিকরুল আহমেদ এবার ছাড় দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, জেলা সদরের আসনটি কোনো আনকোরা দলের কাছে ছাড়া হবে না। অবস্থান অনুযায়ী জোটের প্রার্থীদের একটা সম্মানজনক জায়গায় রাখা হবে। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীর বাবা প্রয়াত সাংসদ আগেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, আগে কী ছিল, কেমন ছিল এসব মুখ্য নয়। জনপ্রিয়তা দেখে দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ থেকে জাপা মনোনয়ন পেতে পারে।