তবু শঙ্কা আওয়ামী লীগে

খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন অংশ নিয়েছিলেন। একজন দলীয় প্রার্থী হিসেবে, অন্যজন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে। অবশ্য এ আসনে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করে বর্তমান সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস জয়ী হন।
দলাদলির জের এখনো আছে। শেষ পর্যন্ত এবার যাঁকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, সবাই এক হয়ে কাজ করবেন বলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জানিয়েছেন। কিন্তু দ্বন্দ্বের জের পুরোপুরি নিরসন হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে এই আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান একাই বিএনপির হয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। নিজেদের ভোটের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একটি অংশের ভোট তাঁর বাক্সে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
খুলনা-১ আসনটি দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চালনা পৌরসভা নিয়ে গঠিত।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাস ৬৬ হাজার ৯০৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ননী গোপাল মণ্ডল ৩৪ হাজার ৫২৭ ভোট পান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ননী গোপাল ১ লাখ ২০ হাজার ৮০১ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী আমীর এজাজ খান পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৪০২ ভোট।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ১১ জন। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে বর্তমান সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস ও সাবেক সাংসদ ননী গোপাল মণ্ডল। জাতীয় পার্টির হয়ে দলটির চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব সুনীল শুভ রায় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সুনীল শুভ রায় ৫ হাজার ৯৮১ ভোট পান।
নির্বাচনী সমঝোতায় আসনটি শরিক দলের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া লাগতে পারে বলেও এলাকায় গুঞ্জন আছে। তবে এটি বরাবরই আওয়ামী লীগের নিজের আসন হিসেবে বিবেচিত।
সুনীল শুভ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৃপ্তির জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের অনেকে বলছে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। মহাজোট হলে আমাকে ওই আসনে প্রার্থী করা হবে। মহাজোট না হলে এককভাবে নির্বাচন করব।’
দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী শেখ আবুল হোসেন বলেন, ‘দলের স্বার্থে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে নেতা–কর্মীদের নিয়ে তাঁর পক্ষেই কাজ করব।’
দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই পক্ষ কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। বিষয়গুলো এখন আর শুধু রাজনৈতিক নেই, এটা সামাজিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়েও চলে গেছে।’
বর্তমান সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার কথা বলতে পারি, নৌকা যাঁকে দেবে তাঁর সঙ্গে থাকব। আমাকে দিলে যেন সবাই আমার সঙ্গে থাকে। এখানে বেশির ভাগ হিন্দু ভোট। হিন্দুরা লাঙলে ভোট দেবে না। জাতীয় পার্টির সময়ে আমরা থানা ঘেরাও করেছিলাম। ওই সময়ে আমিও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। এখানকার মানুষ জাতীয় পার্টির ওপর খ্যাপা।’
সাবেক সাংসদ ননী গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘মনোনয়ন কে পাচ্ছে, এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা এখনো নেই। নেত্রীর কাছে ওয়াদা করেছি দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেভাবেই দলের হয়ে কাজ করব। তবে দলের সাধারণ ভোটাররা কী করবেন, তা এখনই বলতে পারছি না।’

স্বস্তিতে বিএনপি
এই আসনে একক প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে আছে বিএনপি। এখানে বিএনপির প্রার্থী দলের খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান। বিগত দুটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হলেও পরাজিত হন। তবে ভোট পেয়েছিলেনে উল্লেখসংখ্যক। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ দুর্গে আঘাত হানতে তিনি যোগ্যতম প্রার্থী বলে দল মনে করে।
প্রথাগতভাবে এই দুই উপজেলার যেসব এলাকা মুসলিম–অধ্যুষিত সেখানে ভালো ফল করে বিএনপি। বর্তমানে এই আসনে হিন্দু–মুসলিম ভোটের পার্থক্য কমায় দলটি আগের চেয়ে ভালো করবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার
নির্বাচনী এলাকায় সরকার আমাকে মিছিল–মিটিং কিছুই করতে দেয়নি। তারপরও মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। এই আসনে দলে কোনো কোন্দল নেই। ২০০৮ সালের আমি প্রচুর ভোট পেয়েছিলাম। এখন বিএনপির ভোট আরও বেড়েছে। আওয়ামী লীগে বিরোধ থাকায় তাঁদের প্রার্থী যে–ই হোক না কেন, একটি বড় অংশের ভোটও আমি পাব। এবার নিরপেক্ষ ভোট হলে এখান থেকে বিএনপিই জিতবে।’