আওয়ামী লীগে কোন্দল, ঐক্যবদ্ধ বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-৫ আসনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বিএনপিতে প্রার্থীজট থাকলেও রয়েছে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন আটজন, বিএনপি থেকে চাইছেন ১৪ জন।

 আওয়ামী লীগ

দলের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ও তাঁর ছেলে রাজিব আহমেদ এবং ছোট ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশীদ, আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটি সদস্য রিয়াজুল কবীর কাউছার, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সামছুল হক, আইনজীবী তৌফিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার।

এই আসনে টানা পাঁচবারের সাংসদ রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। বার্ধক্যজনিত কারণে কিছুটা অসুস্থ হলেও নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় আছেন তিনি। এ ছাড়া হারুন অর রশীদ, রিয়াজুল কবীর ও সামছুল হক ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।  

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, নিকট অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করা, অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে রায়পুরা আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাদের মধ্যে এসব বিভক্তির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে নীলক্ষা, বাঁশগাড়ীসহ একাধিক ইউনিয়নে দফায় দফায় ঘটেছে সংঘর্ষ। ঘটেছে বেশ কয়েকটি হত্যার ঘটনা। এবারের নির্বাচনে এসবের প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বর্তমান সাংসদ রাজিউদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে গতকাল মঙ্গলবার কয়েকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সব রাজনীতিবিদই চান জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের সেবা করতে। আমি রায়পুরার জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। বাকিটা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা। আমি যদি মনোনয়ন পেয়ে এলাকার সাংসদ হতে পারি চরাঞ্চলের বর্বর টেঁটাযুদ্ধ বন্ধ করব।’

 বিএনপি

দলের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন ১৪ জন। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক আশরাফ উদ্দিন বকুল, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে নেছার উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এন জামান, জামাল আহমেদ চৌধুরী ও ফজলুর রহমান, উপজেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. শাহ আলম, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসীন হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান সরকার, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি আলী রেজাউর রহমান, উপজেলা বিএনপির সদস্য ইফতেখার হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক মন্ত্রী মাইনুদ্দীন ভূঁইয়ার ছেলে রফিকুল আমিন ভূঁইয়া এবং প্রবাসী রাশেদুল ইসলাম।

ক্ষমতাসীন দলের মামলা-হামলার ভয়ে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেভাবে না থাকলেও উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নেই রয়েছে বিএনপির ঐক্যবদ্ধ অবস্থান।  দল গোছানোর পাশাপাশি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে তাঁর পক্ষেই সবাই কাজ করবেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী জামাল আহমেদ চৌধুরী। নির্বাচনে বিপুল ভোটে হারলেও ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে জামাল আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন। দলের সমালোচনা ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদ ছাড়তে হয় তাঁকে। দুই বছর আগে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এ কে নেছার উদ্দিনকে সভাপতি ও আবদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে রায়পুরা উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে দলীয় কর্মকাণ্ডে প্রাণ ফিরে আসে। নেতা–কর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন আশরাফ উদ্দিন ও এ কে নেছার উদ্দিন। তাঁরা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এত দিন এলাকায় প্রচার, দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও গণসংযোগ করেছেন।

এ কে নেছার উদ্দিন বলেন, ‘হারানো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তৃণমূলের সব নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে আছেন। এই কারণেই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আশা করছি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তবে প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে দল যাঁকেই মনোনয়ন দেবে, তাঁর জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা কাজ করব।’

আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যদি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, তবে এই আসনে বিএনপিই বিজয়ী হবে। আশা করছি, দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।’