নির্বাচনী কর্মকর্তা বাছাই করছে পুলিশ: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রথম আলো ফাইল ছবি
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রথম আলো ফাইল ছবি

প্রায় সাড়ে ছয় লাখ নির্বাচনী কর্মকর্তার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের দলীয় লোক বাছাই করে তালিকা প্রস্তুত করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে সারা দেশে ৪১ হাজার প্রিসাইডিং কর্মকর্তার তালিকা পুলিশ প্রস্তুত করে ফেলেছে। এখন দুই লাখ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও চার লাখ পোলিং কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করার দায়িত্ব পুলিশই পালন করছে।

এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রুহুল কবির রিজভী এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকারের ‘অনুগত’ নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনোভাবে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন আরেকটি ‘পাতানো’ নির্বাচনের পথে হাঁটছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন দায়ী।

রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, পুলিশের তৈরি করা তালিকা শুধু চূড়ান্ত করার পথে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। পুলিশ যে তালিকা প্রস্তুত করছে বা করেছে, তার যথেষ্ট প্রমাণ বিএনপির কাছে রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও অনলাইনে পুলিশ কর্তৃক নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করার খবর বড় করে প্রকাশিত হলেও ‘নখদন্তহীন’ কমিশন রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। ক্ষেত্রবিশেষে অস্বীকারও করছে। তিনি বলেন, দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে জনগণের ভোটাধিকার আবার হরণ করার জন্য নতুন চক্রান্তে মেতেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন।

খুলনার একটি উপজেলার তথ্য জানিয়ে রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনায় সম্ভাব্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের তালিকা করেছে খুলনার হরিণটানা থানার পুলিশ। তালিকা প্রস্তুত করার আগে নির্বাচন কর্মকর্তাদের বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারবিরোধী কেউ থাকলে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় দেখা গেছে, চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন শিক্ষকের নাম। এঁদের ভেতরে ৬৩ জন বা ৮৫ শতাংশই আওয়ামী লীগ-সমর্থক। একইভাবে সারা দেশেও তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে যেভাবে প্রশাসন সাজানো হয়েছিল, তা সেভাবেই আছে। আওয়ামী লীগের ‘দলবাজ’ কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। এখন পর্যন্ত কোনো এসপি, ডিসি, ইউএনও বা ওসিকে বদলি করেনি নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর বদলি বা পদায়নে কমিশনের মতামত লাগবে, অথচ এখনো সরকারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে সরকারের সাজানো পুলিশ বাহিনীতে যেন কোনো ধরনের পরিবর্তন বা বদলি করা না হয়, সে জন্য গত সোমবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সরকারের ‘অনুগত’ একদল পুলিশ কর্মকর্তা বৈঠক করে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হলেও ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ কমিশন সেই ক্ষমতার প্রয়োগ না করে সংবিধান লঙ্ঘন করছে। সরকারকে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আনার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য আহ্বান জানান রিজভী।