আওয়ামী লীগের 'ভোটব্যাংকে' ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৩ আসনে নৌকার টিকিট নিয়ে চলছে মিশ্র আলোচনা। এখানে আওয়ামী লীগের চারজন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ছয়জন। তবে অনৈক্য ও নেতৃত্বের সংকটে থাকা বিএনপির চেষ্টা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীরা হলেন বর্তমান সাংসদ রহমত আলীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামিল হাসান ওরফে দুর্জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ওরফে সবুজ, গাজীপুর জেলা জজকোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হারিছ উদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু আক্তার হোসেন খান।

বিএনপির একটি সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে বাচ্চু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন ওরফে সবুজ, কেন্দ্রীয় ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা এস এম রুহুল আমীন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির, উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ ফরিদা জাহান স্বপ্না ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম।

এই আসন আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। বাণিজ্যিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের পাঁচবারের সাংসদ হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো. রহমত আলী। তিনি কয়েক বছর ধরে অসুস্থ থাকায় তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন ছেলে জামিল হাসান। তিনি আওয়ামী লীগের বাণিজ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। একই আসনে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। ২০০৯ সালে তিনি শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এই আসনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হতে পারেন, এমন আলোচনা চলছে সবখানে। নির্বাচন–পূর্ববর্তী প্রচারণায় ইকবাল হোসেন ও জামিল হাসান ছিলেন সরব। এই প্রার্থীদের নিজেদের লোকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীর মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনার খবর জানান দিচ্ছেন। প্রার্থীর কর্মীরাও থেমে নেই।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য যে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে যান, তা বিএনপির প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। তবে বিএনপির প্রার্থীরা জানান, বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে যাওয়ার মধ্যে জনপ্রিয়তার কিছু নেই। তাঁদের দাবি, তুমুল জনপ্রিয় এই দলটির প্রচুর ভোটার আছে। শুধু সুযোগের অপেক্ষা চলছে। আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, গাজীপুর তথা শ্রীপুর বরাবরই আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক। এখানে নৌকার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার কথা নয়। টানা পাঁচবার এখানে আওয়ামী লীগের সাংসদ থাকায় নৌকার কোনো বিকল্প নেই।

ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শ্রীপুরের তৃণমূল মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি এবং তাঁদের সমস্যাগুলো শুনতে উঠান বৈঠক করেছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দেখেছি, মানুষ আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি প্রত্যাশা করছি, দলীয় নেতৃত্ব আমাকেই মনোনয়ন দেবেন।’

জামিল হাসান বলেন, ‘আমার বাবা সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে আওয়ামী লীগ থেকে টানা পাঁচবার সাংসদ হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর অসুস্থতায় আমি ওনার হয়ে মানুষের কাছে গিয়েছি। মানুষের দাবিগুলো শুনেছি। সরকারের উন্নয়ন প্রচারে উন্নয়ন সভা করেছি। আমিই মনোনয়ন পাব বলে বিশ্বাস করি।’

বিএনপির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে সরকারের সময়কালে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মামলা-হামলার মধ্যে জটিল সময় পার করেছে। এ সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালানো কঠিন ছিল। তবে শ্রীপুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য কয়েক বছর ধরে বৈঠক করেছি। বিএনপির নির্যাতিত নেতাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। স্থানীয় বিএনপির নেতৃত্বের সমর্থন নিয়েই আমি দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছি। মনোনয়ন পেলে এই আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত।’ প্রায় একই কথা জানান জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা হিসেবে দমন-নিপীড়নের মধ্যে ছিলাম। এমন জটিল পরিস্থিতিতেও এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। বিএনপির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মনোনয়ন পেলে এই আসনে বিএনপির প্রার্থীই জয়ী হবে।’

এই আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং ও ইশতেহার কমিটির সদস্য ইকবাল সিদ্দিকী।  জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির উপজেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা রহমত উল্লাহ।

ঐক্যফ্রন্ট থেকে ইকবাল সিদ্দিকীকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, জোট থেকে তিনি মনোনয়ন চেয়েছেন। তিনি এলাকাবাসীর জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করবেন। শ্রীপুর একটি উন্নয়নবঞ্চিত এলাকা। সেখানে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। তিনি এলাকায় উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করার সুযোগ চান। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি এলাকায় নেতা–কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।