কামালের সম্ভাবনা, বিএনপিতে অনিশ্চয়তা

ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের পুরোনো নেতা কামাল আহমেদ মজুমদার এবারও মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন—এমন আলোচনা এলাকার সর্বত্র। দলের আরও তিনজন নেতা এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে বিএনপি থেকে এই আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। জামায়াতও রাজধানীর এই আসনটি চায়।

ঢাকা-১৫ আসনের জন্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ দলের আরও আরও পাঁচজন নেতা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৩ নভেম্বর ঢাকা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান।

ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসনটি গঠিত হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। এসব ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে মিরপুরের সেকশন ১৩ ও ১৪, বড়বাগ, পীরেরবাগ, মণিপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া পর্বতা, ইব্রাহিমপুর ও কাফরুল। ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬২।

১৯৯১ সাল থেকে পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তিনবার আওয়ামী লীগ ও দুবার বিএনপি বিজয়ী হয়েছে। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের ড. কামাল হোসেনকে হারিয়ে এই আসনে বিজয়ী হন বিএনপির হারুন রশিদ মোল্লা। ১৯৯৬ সালে বিএনপির এখলাস উদ্দিন মোল্লাকে হারিয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার। আবার ২০০১ সালে আসনটি বিএনপির কবজায় আসে। এই দফায় বিএনপির এস এ খালেক নির্বাচিত হন।

এরপর সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে কামাল আহমেদ মজুমদার বিএনপির হামিদুল্লাহ খান বীর প্রতীককে হারিয়ে দেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লাকে ২৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান তিনি।

এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে ‘শতভাগ আশাবাদী’ কামাল মজুমদার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম
আলো
কে বলেন, ‘আমার কাজের জন্যই দল ও এলাকার লোকজন আমাকে মনে রাখবে। মূল্যায়ন করবে। তাই মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত।’

এই আসনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ্ সাইফুল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, এঁদের মধ্য মাইনুল হোসেন খান ও গাজী মেজবাউল হোসেন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। আর এলাকার ছেলে হিসেবে এম সাইফুল্লাহর জনসম্পৃক্ততা বেশি বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

তবে এলাকায় কামাল আহমেদ মজুমদারের মূল শক্তির জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয় মনিপুর স্কুল ও কলেজকে। রাজধানীর পাঁচটি শাখায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪ হাজারের বেশি। অনেকেই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে কামাল মজুমদারের ভোটব্যাংক মনে করেন। কামাল মজুমদার নিজে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। এখানে তিনি প্রচুর সময় দেন। এই প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি অভিহিত করেন তাঁর গর্বের জায়গা হিসেবে। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনের পাশাপাশি ঢাকা-১৫ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছেন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন ও সহসাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, কাফরুল থানা সভাপতি জিল্লুর রহমান এবং মিরপুর থানা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মতিন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বরিশাল-৫ আসনের জন্যও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে কোন আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দল আমাকে যেখান থেকে মনোনয়ন দেবে, আমি সেখান থেকেই নির্বাচন করব। তবে আমি আমার জন্মভূমি বরিশালেই ফিরে যেতে চাই।’

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, নির্বাচন সামনে রেখে এখনো পর্যন্ত তাঁরা এলাকায় কোনো সাংগঠনিক কিংবা নির্বাচনী কার্যক্রম
চালাতে পারছেন না। পুলিশি নজরদারির কারণে অনেক নেতাই এখন রাতে বাড়িতে থাকতে পারেন না। এমনকি মহিলা দলের অনেক নেত্রীও
ঘরছাড়া। তাঁরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন ভোটের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেও তা আদৌ হবে কি না, সে ব্যাপারে তাঁরা সন্দিহান।

এদিকে অনেক আগে থেকে শোনা যাচ্ছিল জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুর রহমান সিলেট সদর আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।

এখন ঢাকা-১৫ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সম্প্রতি জানান, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শফিকুর রহমানকে এই আসনে প্রার্থী হতে অনুরোধ করা হয়েছে।

শফিকুর রহমান জামায়াতের পক্ষ থেকে জোটের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান। তাই দল ও জোটের মধ্যে সমন্বয় রক্ষার জন্য তাঁর ঢাকায় অবস্থান প্রয়োজন।