জামায়াতকে নিয়ে আবার শঙ্কায় পড়ল বিএনপি

এবারও রাজশাহীতে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে জামায়াতের এক মনোনয়নপ্রত্যাশী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। ২০০৮ সালেও দলটি তা–ই করেছিল। ফলে ওই সময় সারা দেশে জামায়াত–বিএনপি জোটগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করলেও এই আসনে জামায়াত ও বিএনপির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। পরে রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে বিএনপি প্রার্থী এই আসনেই সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এবারও এখানে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয় কি না, তা নিয়ে বিএনপি শঙ্কায় ছিল। গত সোমবার জামায়াত নেতার মনোনয়নপত্র তোলার মধ্য দিয়ে সেই আশঙ্কাই যেন সত্যি হতে যাচ্ছে।

রাজশাহী-৩ আসন থেকে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জামায়াতের শুরা কর্মপরিষদ সদস্য মাজিদুর রহমানের পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের রাজনীতি বিভাগ দেখাশোনা করেন। গত সোমবার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদের কাছ থেকে তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পবা উপজেলা জামায়াতের আমির জালাল উদ্দিন, মোহনপুর উপজেলা জামায়াতের আবদুল গফুর মৃধা, কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন প্রমুখ।

এর আগে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। মুজিবুর রহমান নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির। ১৯৮৬ সালে এই আসন থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, মুজিবুর রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র তোলার পর তারা ধারণা করছিল, রাজশাহী-১ আসনই তারা দাবি করবে। কিন্তু রাজশাহী-৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র তোলার পর তারা আশঙ্কা করছে, ২০০৮ সালের মতোই তারা রাজশাহী-৩ আসন দাবি করে কি না। তারা রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে অন্তত একটি আসন নিতে অনড় অবস্থানে যাবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের রাজশাহী-৩ আসনে জামায়াত প্রার্থী আতাউর রহমান ৩২ হাজার ৫২৭ ভোট পেয়েছিলেন। বিএনপি প্রার্থী কবির হোসেন পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ৬৪৯ ভোট। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেরাজ উদ্দিন মোল্লা পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৭ ভোট। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপি প্রার্থীর ব্যবধান বেশি ছিল।

জামায়াতের পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও জামায়াতের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রাজশাহী মহানগরের বর্তমান সহসভাপতি আফাজ উদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা রাজশাহীর দুটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসন চান। তাঁরা শুনেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনটি তাঁদের দেওয়া হতে পারে। কিন্তু রাজশাহীর দুটির মধ্যে একটি আসন অবশ্যই তাঁরা চান। এ জন্য দুটি আসন থেকে তাঁরা মনোনয়নপত্র তুলেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা পাননি। তাঁরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। কেন্দ্রে থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তাঁরা সেই অনুযায়ীই কাজ করবেন।

রাজশাহী-৩ আসন থেকে এবার রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। একই আসন থেকে জামায়াত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র তোলার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াতের সিদ্ধান্ত জামায়াতের কাছে। তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছেন। এখন জামায়াত কী করবে তা তাদের ব্যাপার।