এবার রফিকুলের সাজা বিএনপিতে হতাশা

রফিকুল ইসলাম মিয়া ও কাজী কায়কোবাদ
রফিকুল ইসলাম মিয়া ও কাজী কায়কোবাদ

কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন। একই আসনে দলটির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়াকে গতকাল মঙ্গলবার তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সাবেক সাংসদ কায়কোবাদ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজা পেয়েছেন। আর সাবেক সাংসদ ও মন্ত্রী রফিকুল দণ্ড পেলেন সম্পদের বিবরণী জমা না দেওয়ার দুদকের করা মামলায়। এ অবস্থায় নির্বাচনে এ দুই নেতার অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এতে দলটির উভয় নেতার অনুসারী নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

তবে দলটির নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, আইনি জটিলতার বিষয়টি মাথায় রেখে ওই দুই নেতা কৌশলে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। কায়কোবাদ ছাড়াও তাঁর ছোট তিন ভাই কে এম মুজিবুল হক, কাজী জুন্নুন বসরী ও কাজী শাহ আরেফিন ফরম নিয়েছেন। একই আসনে রফিকুল ও তাঁর স্ত্রী শাহিদা রফিকও ফরম সংগ্রহ করেছেন।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবুল হক বলেন, কায়কোবাদের পরিবার থেকে যে কাউকে মনোনয়ন দিলে বিএনপি এই আসনে জিতবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় গত ১০ অক্টোবর যাবজ্জীবন সাজা হয় কায়কোবাদের। এর ছয় বছর আগ থেকেই তিনি বিদেশে আছেন। এদিকে সম্পদের হিসাবের বিবরণী জমা না দেওয়ায় দুদকের মামলায় গতকাল রফিকুলকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক শেখ গোলাম মাহাবুব। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আদালতে রফিকুল ইসলাম অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সাজার পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আদালত ও দলীয় সূত্র জানায়, ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়ায় রফিকুল কুমিল্লা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করেন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে সে নির্বাচনে জয়ী হন কায়কোবাদ। এরপর বিএনপি সরকারের আমলেই ২০০১ সালে দুদক রফিকুলকে সম্পদের হিসাবের বিবরণী দেওয়ার জন্য নোটিশ দেয়। তা না দেওয়ায় ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার উত্তরা থানায় মামলা হয়। সে বছরের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর রফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর ছয়জনের সাক্ষ্য নেওয়া শেষে গতকাল রায় দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী শাহিদা রফিকের মুঠোফোনে গতকাল বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ কুমিল্লা-৩ আসন থেকে ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র এবং ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সাংসদ ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সালে তিনি জাপার সাংসদ হন, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপির রফিকুল ইসলাম মিয়ার কাছে পরাজিত হন। রফিকুল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিও সাংসদ হন। একই বছরের ১২ জুন নির্বাচনে তিনি হেরে যান। ২০০১ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হারেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

 সংশোধনী: গতকাল প্রথম আলোয় ‘কুমিল্লা-৩ আসন; মনোনয়ন লড়াইয়ে তিন পরিবারের আটজন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে কায়কোবাদের ভাই কাজী শাহ আরেফিন কারাগারে আছেন বলের উল্লেখ আছে। মূলত কারাগারে আছেন কায়কোবাদের আরেক ভাই কাজী আবু কাউসার।