দিনে ঘুম, রাতে কাটেন গ্রিল

মো. হজরত আলী, মো. শাহিন ও রাজুকে গত মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের মণিপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। ছবি: সংগৃহীত
মো. হজরত আলী, মো. শাহিন ও রাজুকে গত মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের মণিপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। ছবি: সংগৃহীত

ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরেছেন। নিজের ঘরে ঢুকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ হয়তো সাইড টেবিল কিংবা খাটের ওপর ফেলে ঘুমিয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার মূল্যবান প্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলো নিজের ঘরে রেখে হয়তো খাবার টেবিলে বসেছেন। কিন্তু ঘুম ভেঙে বা ঘরে এসে দেখেন, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন কিছুই নেই। কখনো কখনো আবার আলমারি, ওয়ার্ডরোব খোলা পাওয়া যায়; সেখান থেকে উধাও হয়ে যায় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার। খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে দেখা যায়, জানালার গ্রিলটি ছোট্ট করে কাটা। তখন হতাশার মনে ভাবনায় আসে বারবার, ‘খুব পাক্কা চোরের কাজ।’

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা বলছেন, এমনই এক ‘পাক্কা চোরের’ নাম মো. সগির ওরফে রাজু (২৭)। হালকা-পাতলা গড়ন। শারীরিক এই গড়নকে চুরিবিদ্যায় ভীষণ দক্ষতায় কাজে লাগিয়েছেন রাজু। যেকোনো উঁচু ভবন বেয়ে উঠে যেতে পারেন তিনি। ১০ তলা উচ্চতার ভবনে উঠতে রাজুর এক টুকরো দড়িরও প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি দুটি সুউচ্চ ভবন হলে তো কথাই নেই। রাজু এসব ভবনের স্যানিটারি পাইপ, পানির পাইপ বা সানশেড বেয়ে উঠে যেতে পারেন দ্রুতগতিতে। ভবনে উঠে কোনো ফ্লোরের একটি জানালা খোলা পেলে বাড়তি সুবিধা। ১০ ইঞ্চির মতো ফাঁকা হলেই পুরো শরীরটাকে বিড়ালের মতো চিকন করে ফেলেন রাজু। ঘরে ঢুকে সব জিনিসপত্র নিজের করে নেন তিনি। আর বন্ধ থাকলেও গ্রিল কেটে ফেলেন রাজু। তিনি দিনে ঘুমান, আর রাতে গ্রিল কেটে চুরি করেন।
পিআইবি সূত্র জানায়, রাজুর ওস্তাদ মো. হজরত আলী ওরফে রকি। আরেক সঙ্গী মো. শাহিন (২৫)। রাজুসহ তিন চোরের দলকে ২০ নভেম্বর রাত সোয়া ১১টার দিকে মিরপুরের মণিপুর এলাকার মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআইয়ের একটি দল। তাঁদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক, মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু চোরাই পণ্য উদ্ধার করা হয়। পিবিআইয়ের তিন পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, জুয়েল মিয়া ও হুমায়ুন কবির মোল্লা এবং উপপরিদর্শক ফরিদউদ্দিন বিশেষ এ অভিযানে অংশ নেন।
পরিদর্শক জুয়েল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ২০১২ সাল থেকে রাজধানীর বাসাবাড়ি থেকে মালামাল চুরির সঙ্গে জড়িত এই দল। দলের প্রধান হলেন হজরত আলী ওরফে রকি। রাজুকে লালনপালন করেন রকি। তাঁর আরেক সহকারী শাহিন। রাজুকে সাভারের আমিনবাজারের কাউন্দিয়া এলাকার একটি বাসা ভাড়া করে থাকতে দেন রকি। কাউন্দিয়ায় যাতায়াতের জন্য নৌকায় করে তুরাগ নদ পারাপার করতে হয়। রাজু সারা দিন নিজের বাসায় ঘুমিয়ে থাকেন। রাতে জেগে থাকেন। প্রতিদিন রাতে কাউন্দিয়া ঘাট পারাপার হন তিনি। শাহিনের মাধ্যমে বাড়ির খোঁজ করে চুরি করতে নেমে পড়েন। চুরি করে মোবাইল, ল্যাপটপ, গয়না বা টাকা যা–ই পাওয়া যাক না কেন, সবই তুলে দেন ওস্তাদ রকির হাতে। রকি এসব চোরাই পণ্য ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত বিপণিবিতানে কম দামে বিক্রি করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআইয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১৪ অক্টোবর মিরপুরের বড়বাগ এলাকার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তির বাসার গ্রিল কেটে একটি অ্যাপল (ম্যাক বুক), একটি আসুস ল্যাপটপ, একটি স্যামসাং নোট-৫ মোবাইল ফোন, একটি স্যামসাং এস-৬ মোবাইল ফোন, একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, নগদ পাঁচ হাজার টাকাসহ মোট আড়াই লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। এ ঘটনায় ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্তে তিন চোরের চক্রটির সন্ধান পাওয়া যায়।