কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারিনি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চতুর্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন সংস্থার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চতুর্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন সংস্থার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মনে করেন, যে উদ্দেশ্যে কমিশন গঠিত হয়েছিল, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়তো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফল হয়নি। কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মানুষের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে দুদকের চতুর্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।

দুদকের চেয়ারম্যান এ সময় একটি ঘটনা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনকালে পেশিশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে জনগণের যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধে এগিয়ে আসার কথা ছিল, সেভাবে আসেনি। তবে দেরিতে হলেও প্রতিবাদ হয়েছিল। এ ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়, আমরা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারিনি।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, আত্মসমালোচনা করতে আমি ভয় পাই না। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম প্রতিটি অনুসন্ধান বা তদন্ত নির্ধারিত সময়ে শেষ করব, বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। সে কারণেই জন আস্থার ঘাটতি রয়েছে। তিনি কর্মকর্তাদের আরও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তির রাজনৈতিক, সামাজিক বা পেশাগত পরিচয় কমিশনের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। কেউ যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে কালোটাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জন বা পেশি শক্তি ব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন, তাহলে কমিশন তাঁকে আইন-আমলে নিয়ে আসবে।

চেয়ারম্যান বলেন, কমিশন চায় দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করতে। তাই কমিশন বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর বা সংস্থার দুর্নীতির সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশ সরকারের কাছে পাঠাচ্ছে। এগুলো স্বতঃসিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। কমিশনের স্বীয় বিবেচনায় এসব সুপারিশ করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তারা যদি কোনো অবৈধ চাপ বা অনৈতিক কোনো উদ্দেশ্যে দুর্নীতি করেন, তাহলে তাঁদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে বলেও সতর্ক করেন দুদক চেয়ারম্যান। তবে অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে কারও বিরুদ্ধে কমিশন কোনো মামলা-মোকদ্দমা করবে না বলেও দুদক চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে তখনই সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যখন কমিশনের মামলায় শতভাগ সাজা নিশ্চিত হবে। যদিও এ ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের সফলতা রয়েছে, কারণ সাজার হার ক্রমাগত বেড়ে তা প্রায় ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের গোয়েন্দা ইউনিটের কার্যক্রমের প্রশংসা করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে জনশ্রুতি রয়েছে এমন অনেক ব্যক্তির অপকর্মের আমলনামা এখন দুদকের হতে। সময় ও সুযোগ বুঝেই তাঁদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তিনি বলেন, যদি সরকারি কর্মচারী আইনে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দেওয়ার কোনো বিধিবিধান না থাকে, তাহলে আগামী বছর তাঁদের সম্পদ বিবরণীর ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে দুদক কাজ করতে পারে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, কোনো কালোটাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীকে দেশের জনগণ নির্বাচিত করবে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে নির্বাচনী ব্যয়ের নামে কালোটাকা ব্যয়ের বিষয়টি দুদক পর্যবেক্ষণ করবে। কমিশন প্রত্যাশা করে নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবাই স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন এবং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন কমিশনে ব্যয় বিবরণী জমা দেবেন। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে কিংবা সেখানে অবৈধ সম্পদের কোনো বিষয় থাকলে দুদক আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে।
মতবিনিময় সভায় দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদক দেশের প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা সংঘ গঠন করেছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে গণশুনানি করছে। এ জাতীয় গণশুনানি দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কমিশনের সচিব মো. শামসুল আরেফিন, মহাপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক শিরিন পারভীন, উপপরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, সহকারী পরিচালক সেলিনা আখতার মনি প্রমুখ।
এর আগে সকালে রাজধানীর নীলক্ষেতের ব্যানবেইজে সততা স্টোরের উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান।
২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়। ২১ নভেম্বর সরকারি ছুটি থাকায় আজ সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করা হয়।