মান্না ধানের শীষ পেলে বিদ্রোহী হবেন বিউটি?

ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ও বগুড়া জেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম
ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ও বগুড়া জেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনকে বলা হয় বিএনপির ‘দুর্গ’। এখানে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া মানেই নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত বলে ধরে নেওয়া হয়। আসন্ন নির্বাচনে এখানে দলীয় নেতাকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সারির নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেওয়া হলে বিদ্রোহী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা বিউটি বেগম। এ জন্য তিনি মনোনয়নপত্রও তুলেছেন। সবাইকে জানান দিতে অনুসারীদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভোটারদের কাছেও যাচ্ছেন তিনি।

বিউটি বেগম উপজেলা পরিষদের পরপর দুই বারের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি ও বগুড়া জেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক।

বিউটি বেগম বলছেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতাকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ধানের শীষ প্রতীক দিলে এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী না দিয়ে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ মহাজোটের প্রার্থী হলে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবেন।

বিউটি বেগমের অনুসারী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রাজনৈতিক মারপ্যাঁচটি সুচারুভাবে রূপায়ণের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী একটি অংশ। ওই অংশটি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না। তারা মনে করছে, মান্না এ আসনে একবার সাংসদ হলে অনেকের প্রভাব থাকবে না।
এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশেরও একই অবস্থা। তারা সাংসদ হিসেবে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহকে অপছন্দ করে। এ অংশটিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য বিউটি বেগমের পালে হওয়া দিয়ে চলেছে।

বিউটি বেগমের কয়েকজন অনুসারী বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পরপর দুবার ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিএনপি নেত্রী হিসেবে এ আসনে বিউটি বেগমের বেশ ভালো পরিচিতি রয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর কাজকর্ম অনেকেই পছন্দ করেন। এ অবস্থায় দলীয় কোনো নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া না হলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির অনেক ভোট টানতে পারবেন বলে আশা করছেন। শুধু বিএনপিরও নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের অনেক ভোটও তিনি পাওয়ার আশা করছেন। এ কারণে তিনি আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে উপজেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্যসচিব সাইদুর রহমান বলেন, বিএনপি এ আসনে জনপ্রিয় দল। আর মাহমুদুর রহমান মান্না জনপ্রিয় ব্যক্তি। দুইয়ে মিলে এবার এ আসনে ভোটবিপ্লব ঘটবে। তিনি বিশ্বাস করেন, বিউটি বেগম শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না। আর হলেও তাতে কিছু যায়-আসে না।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ কথাটি আমার কানেও এসেছে। তবে আমরা বলে দিয়েছি, প্রার্থী যাঁকেই করা হোক, তাঁর পক্ষে সবাইকে থাকতে হবে। দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে দল তাঁকে দ্রুত বহিষ্কার করতে বাধ্য হবে।’

বিউটি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় যেকোনো নেতাকে ধানের শীষ প্রতীক দিলে আমার আপত্তি নেই। তবে অন্য কাউকে ধানের শীষ প্রতীক দিলে আমি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। এতে দল আমার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।’ তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ থেকেও এলাকায় তাঁদের দলীয় কোনো নেতা মনোনয়ন পাচ্ছেন না। আবার স্থানীয় বেশ কিছু নেতার সঙ্গে সাংসদের রয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব। এতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরও অনেক ভোট তিনি পাবেন।