শরিকেরা পাচ্ছে দুটি আসন?

>

ফেনীর তিন আসনে দলীয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়ার দাবি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।

মহাজোটে আসন ভাগাভাগিতে ফেনীর তিন আসনের দুটিই শরিকদের ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, আসনে দলীয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক। ইতিমধ্যে গত বুধবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে মনোনয়নের দাবিতে নেতা-কর্মীরা দাগনভূঞা উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, এলাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন চলছে, ফেনী-৩ আসনে (সোনাগাজী ও দাগনভূঞা) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি ফেনী-৩ আসনে নির্বাচন করার ইচ্ছা থেকে প্রথমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার আশায় দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছিলেন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। রাতারাতি তাঁকে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মনোনীত হন। তিনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ফেনী-৩ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ আসনটি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় পার্টির ওই প্রার্থী তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেদ্দা আওয়ামী লীগের সভাপতি রহিম উল্যার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তখন জাতীয় পার্টির প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৩১৫ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিম উল্যাহ পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৬১৫ ভোট।

ফেনী-৩ আসনের দলীয় নেতা-কর্মীরা নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের একজনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে গত বুধবার দুপুরে দাগনভূঞা উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন।  

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক, দাগনভূঞা পৌরসভার কাউন্সিলর জিয়া উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান, সাবেক পৌর প্যানেল মেয়র আবুল হোসেন, পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম বেলাল প্রমুখ।

ফেনী-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবুল বাশার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রোকেয়া প্রাচী, শমী কায়সারসহ  ১৯ জন; জাতীয় পার্টি থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ ৩ জন এবং বিএনপি থেকে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন আহমেদসহ ১৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

অন্যদিকে ফেনী-১ আসনে (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম) বর্তমান সাংসদ ও জাসদের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এবারও  নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছুদিন থেকে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় নানা ধরনের উঠান বৈঠক, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী সভা–সমাবেশে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছেন।

শিরীন আখতার বলেন, খালেদা জিয়া এ আসনে দীর্ঘদিন প্রতিনিধিত্ব করলেও এলাকার কোনো উন্নয়নকাজ করেননি। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না। মানুষ নিজেদের সুখে–দুঃখে তাঁকে কাছে পায়নি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্যই তিনি ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম বলেন, গত কয়েক বছরে ফেনী-১ আসনে সংগঠনকে ভালোভাবে গোছানো হয়েছে। এলাকার তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান, দুজন পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগের। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আসনটিতে জেতা সম্ভব।

 ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম (বীরবিক্রম), ফেনীর সাবেক সাংসদ জয়নাল হাজারী, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঞা, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের ভূঞা, মো. ইলিয়াছ জাকারিয়া ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা আবদুল্লাহ আল হারুন।