সামগ্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে বাম জোট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। খুলনায় এই দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা খুব একটা শক্তিশালী বলা যায় না, তারপরও অপরাজনীতির বাইরে বিকল্প বাম রাজনৈতিক শক্তি জোরদার করার উদ্দেশ্যে ও সামগ্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেউ কেউ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, অপরাজনীতির বাইরে বিকল্প বাম রাজনৈতিক শক্তি জোরদার করাই মূলত তাঁদের লক্ষ্য। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, সুন্দরবনসহ জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনসহ সামগ্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন—আটটি রাজনৈতিক দল নিয়ে এই জোট। এসব দলের মধ্যে খুলনার ৬টি আসনে সিপিবির চারজন, বাসদের একজন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির একজন নেতা প্রার্থী হচ্ছেন।

জোট থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন খুলনা–১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে সিপিবির বটিয়াঘাটা সভাপতি অশোক সরকার, খুলনা–২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে নগর সিপিবির সভাপতি এইচ এম শাহাদৎ, খুলনা–৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনে বাসদের খুলনার সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক কে এম আলীদাদ, খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে সিপিবির ডুমুরিয়া সভাপতি চিত্ত রঞ্জন গোলদার ও খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে সিপিবির পাইকগাছা সভাপতি সুভাষ সানা মহিম।

সিপিবির নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয়ভাবে জোটের নেতারা বসে খুলনার প্রার্থীর তালিকা ঠিক করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন। কেন্দ্র থেকে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে।

বাসদের খুলনার সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু বলেন, ‘আমাদের দেশে দ্বিদলীয় বুর্জোয়া ধারা তৈরি হয়েছে, তার বিপরীতে একটি বাম গণতান্ত্রিক ধারা তৈরির জন্য আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের ব্যবসা বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় ফিরতে হবে। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার রুখতে হবে।’ জোটের সাংগঠনিক অবস্থা নির্বাচনে জেতার মতো পর্যায়ে আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের জেতার সম্ভাবনা আছে। তবে নিজেদের শক্তি নিয়ে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করি না। কিন্তু জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, তা প্রতিফলিত করি।’

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে আছেন বাম জোটের নেতারা। সিপিবির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক এস এ রশীদ বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হচ্ছে এটা আশার কথা। তবে এখনো পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে না নির্বাচন একেবারে সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা এখনো পক্ষপাতমূলক।’