হঠাৎ নিঃসঙ্গ সাংসদ মিজান

মিজানুর রহমান, শেখ সালাহউদ্দিন
মিজানুর রহমান, শেখ সালাহউদ্দিন

খুলনা নগরের ব্যস্ততম সাতরাস্তা মোড় এলাকায় সাংসদ মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত কার্যালয়। কিছুদিন আগেও ওই কার্যালয় ও তার আশপাশে নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগেই থাকত। তিনি কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সঙ্গে থাকতেন অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। কার্যালয় ঘিরে এখন আর সেই ভিড় নেই, গত অক্টোবর থেকে তাঁকে আর কোনো অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবেও দেখা যায় না।

হঠাৎ করেই যেন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনের সাংসদ ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। খুলনা-২ আসনে তাঁর বদলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাইয়ের ছেলে শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের প্রার্থিতা ঘোষণার পরই মূলত বদলাতে থাকে চিত্র। এখনো দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা না হলেও মিজানুরের নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেননি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন একমাত্র শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল।

জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, দলের বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খুলনা-২ আসনে শেখ পরিবারের সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। যেহেতু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে রাজনীতি করার চেষ্টা করি, সে জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়নি। তবে যেই দলীয় মনোনয়ন পাক না কেন, তাঁর পক্ষে কাজ করবেন তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় খুলনা নগর আওয়ামী লীগের একতরফা নিয়ন্ত্রণ ছিল নগর সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের। ২০০৮ সালে মেয়র হওয়ার পর তাঁর আধিপত্য আরও বেড়ে যায়। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে হেরে যান খালেক। অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাংসদ হন মিজানুর রহমান। এরপর মিজানুর একক আধিপত্য গড়ে তোলেন। বিভিন্ন সংগঠন নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ ওঠে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা মাদক ব্যবসায়ী, পৃষ্ঠপোষক ও সহায়তাকারীদের তালিকায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মিজানুর রহমানের নাম রয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের জবাবদিহির সম্মুখীনও হতে হয়েছে তাঁকে।

কিছুদিন আগ পর্যন্ত মিজানুরকে খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মনে করা হচ্ছিল। তবে অক্টোবরের শুরু থেকে গুঞ্জনে উঠে আসে শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের নাম। গত ২৫ অক্টোবর খুলনায় আসেন সালাহউদ্দিন। ওই দিন বর্ধিত সভায় তাঁকে খুলনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

গত সিটি নির্বাচনের আগেও খুলনা নগরের সব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখা হতো মিজানুর রহমানকে। নির্বাচনের পর ওই ধারা কমতে থাকে। তখন তাঁর জায়গাটি দখল করেন নবনির্বাচিত সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন ফরম নিলে শেখ পরিবারের বিপক্ষে চলে যাওয়া হবে। এটা মিজানুরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য শুভকর নয়। এ কারণে তিনি ফরম সংগ্রহ করেননি। তিনি নির্বাচন করতে না পারায় যাঁরা সাংসদের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতেন, তাঁরা আর সেখানে ভিড়ছেন না। তাঁরা এখন সালাহউদ্দিনের কাছে ভিড় করার চেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে সাংসদ বলেন, ‘বিষয়টা তেমন নয়, আমি মনে করি নৌকা যাঁর পক্ষে থাকবে, সবাই সেই পক্ষেই কাজ করবেন। এখানে ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবারই যে নির্বাচন করতে হবে এমন নয়। দলীয় সভানেত্রী যাঁকে ভালো মনে করেছেন, তাঁকেই মনোনয়ন দিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, শেখ পরিবারের সদস্যরা বরাবরই রাজনীতিতে যুক্ত। তাই দলের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জরিপের ভিত্তিতেই প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছেন। যাঁর ভালো কাজের সুনাম কম তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার আশা নেই। এমন পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু খারাপ কাজের তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছিল। তাই আসনটি থেকে হয়তো বিকল্প প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। তা ছাড়া তিনি (মিজানুর) নিজেও দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেননি।