অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে তদন্ত করবে পুলিশ

বুড়িগঙ্গা থেকে যশোরের বিএনপি নেতা আবু বক্করের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ওই মামলার ভিত্তিতেই তদন্ত করবে পুলিশ। আজ শুক্রবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজামান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯ তারিখে লাশ উদ্ধারের দিনই এ মামলা হয়।

মনোনয়ন ফরম কিনতে ঢাকায় এসে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিল পরিবার। গত রোববার রাতে নিখোঁজ হওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর সোমবার বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর লাশ শনাক্ত করেছে পরিবার। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলার জন্য লিখিত অভিযোগ করে আবু বক্করের পরিবার। এতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। তবে, লাশ দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানা থেকে উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় মামলা কোথায় হবে তা নিয়ে দুই থানার মধ্যে ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে।

আবু বক্করের ভাতিজা হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গে লাশ শনাক্ত করেন। লাশ যশোরের কেশবপুরে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে দাফন করা হবে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তাঁর চাচা বিএনপির পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন তুলেছিলেন। ১৯৯৬ সালে ওই আসনে মনোনয়ন পেলেও পরে তা জামাতকে দিয়ে দেওয়া হয়। কেরানিগঞ্জ থানার পুলিশ বুড়িগঙ্গার পাশ থেকে উদ্ধার করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠান। তারা খবর পান কাল বৃহস্পতিবার।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, এটা অপমৃত্যু মামলা হিসেবে কেরানিগঞ্জ থানায় মামলা হওয়ার কথা। কাল তাঁরা এসে অভিযোগ দিয়ে গেছেন। কথাবার্তা চলছে। মামলা কেরানিগঞ্জ থানায়ই হবে।

হুমায়ুন কবির বলেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানায় মামলা করতে বলেন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ১৯ তারিখে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ওইদিনই একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ওই মামলার ভিত্তিতেই তারা তদন্ত করবেন।

নিহত আবু বক্কর (৬৫) বিএনপির যশোর জেলার সহসভাপতি ও কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। পরিবার বলছে, রোববার তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর অপহরণকারী পরিচয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরদিন কথিত অপহরণকারীদের দেওয়া ১০টি বিকাশ নম্বরে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাও পাঠানো হয়। শাহবাগ থানাতেও গিয়েছিল পরিবার।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু জাফর বলেন, অপহরণের বিষয়ে একটা অভিযোগ দিয়েছিল পরিবার। এরপর পুলিশ তদন্ত করেও কিছু পায়নি।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আবু বক্করের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রাতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আবু বক্করকে হত্যার পর লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই অভিযোগ করেছিলেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, আবু বক্কর এবার জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়ানোর তোড়জোড় করছিলেন। মনোনয়ন ফরম কিনতে যশোর থেকে আসা লোকজনসহ তিনি পুরানা পল্টনের তোপখানা সড়কের মেট্রোপলিটন হোটেলে উঠেছিলেন। গত শনিবার তিনি নয়াপল্টন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে রোববার জমা দেন। সোমবার বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

হোটেল মেট্রোপলিটন থেকে গতকাল প্রথম আলোকে জানানো হয়, লোকজনসহ আবু বক্কর ১৫ নভেম্বর হোটেলে ওঠেন। ১৮ নভেম্বর সকালেই তিনি কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করে দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি কক্ষের ভেতরে চাবি রেখে কাউকে কিছু না বলে হোটেল থেকে বের হয়ে যান। পরে তাঁর খোঁজে লোকজন এলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে দুই হাতে দুই ব্যাগ (একটি ব্যাগ, একটি ব্রিফকেস) নিয়ে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। তাঁর অন্য সঙ্গী-সাথিরা তখনো হোটেলেই ছিলেন। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার পুলিশ তদন্ত করতে হোটেলে গিয়েছিল।

পরিবারের লোকজন নিজেদের মতো খোঁজ করতে করতে গতকাল রাতে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গে লাশ শনাক্ত করেন। নিহতের ভাতিজা হুমায়ুন কবীর বলেন, ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় তিনি চাচার সঙ্গে দেখা করতে মেট্রোপলিটন হোটেলে যান। চাচার সঙ্গে কথা বলে তিনি এলাকার আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতে হোটেলের পাঁচতলায় যান। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে আবু বক্করের কাছ থেকে ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে আবু বক্কর বলেন, তিনি রিকশায় করে কোথাও যাচ্ছেন। তখন রমনা পার্কের কাছাকাছি কোনো জায়গায় ছিলেন। তাঁকে কেউ মেরে ফেলতে চায় বলে তিনি শঙ্কিত। এই শঙ্কায় তিনি কাউকে কিছু না বলে হোটেল কক্ষ ছাড়েন বলে ধারণা করছেন হুমায়ুন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, উদ্ধারের সময় আবু বক্করের লাশ ফুলে ছিল। তবে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বুড়িগঙ্গার ‘বেবি সাহেবের ডক ইয়ার্ড’ এলাকা থেকে আবু বক্করের মৃতদেহটি ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ডক ইয়ার্ডটি বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় অবস্থিত। অপর পাড়ে রাজধানীর মিল ব্যারাক পুলিশ লাইনস। লাশের পরনে ছিল সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি ও পায়জামা।