ইসি পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল করবে না

নির্বাচন ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ইসি। ছবি: প্রথম আলো
নির্বাচন ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ইসি। ছবি: প্রথম আলো
>
  • গতকাল বৃহস্পতিবার ইসি-পুলিশ মতবিনিময় হয়
  • সভায় এসপির বলেন, তাঁরা বদলির আতঙ্ক আছেন 
  • ইসি আশ্বাস দেয় কাউকে বদলি করা হবে না
  • ৯২ কর্মকর্তার অবিলম্বে প্রত্যাহার চায় ঐক্যফ্রন্ট
  • তালিকায় ১৭ ডিসিসহ জনপ্রশাসনের ২২ কর্মকর্তা
  • আরও আছেন ৩১ এসপিসহ পুলিশের ৭০ কর্মকর্তা

নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব, জনপ্রশাসন ও পুলিশের ৯২ জন কর্মকর্তার অবিলম্বে প্রত্যাহার চেয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাদের দাবি, এসব কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের অনুগত ও বিতর্কিত। এঁদের সংশ্লিষ্ট পদে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পৃথক ১৩টি চিঠিতে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিএনপির নেতারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জমা দেন। ওই সময় নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছিল ইসি। ঐক্যফ্রন্ট যাঁদের প্রত্যাহার দাবি করেছে, তাঁদের অনেকেই ওই সভায় ছিলেন।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভায় জেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপারদের (এসপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বদলি বা প্রত্যাহার-আতঙ্ক কাজ করছে। এই আতঙ্ক নিয়ে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের আশ্বস্ত করে ইসি বলেছে, আতঙ্কের কিছু নেই। বদলি করা হবে না। ইসির এই আশ্বাস নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা সভা শেষে কর্মস্থলে ফিরে গেছেন।

এর আগেও দুই দফা ঐক্যফ্রন্ট প্রশাসনের রদবদলের দাবি জানিয়েছিল। তখন ইসি বলেছিল, ঢালাওভাবে প্রস্তাব দিলে ইসি তা গ্রহণ করবে না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্টভাবে তা জানালে ইসি খতিয়ে দেখবে।

গতকাল ঐক্যফ্রন্ট যেসব অভিযোগ করে, তাতে সুনির্দিষ্টভাবে ৯২ জন কর্মকর্তা সম্পর্কে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ জনপ্রশাসনের আছেন ২২ জন। যাঁদের ১৭ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। আর পুলিশের আছেন ৭০ জন। তাঁদের মধ্যে পুলিশ সুপার (এসপি) রয়েছেন ৩১ জন। এই তালিকায় জনপ্রশাসনসচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) এবং সব বিভাগের উপমহাপরিদর্শকদের (ডিআইজি) নাম রয়েছে। লিখিত অভিযোগে এসব কর্মকর্তাকে ‘দলবাজ’, কেউ কেউ মন্ত্রীদের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন এবং অনেককে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা মাঠে থাকলে নির্বাচন প্রভাবিত হবে।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি ইসির কর্মকর্তাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। জনপ্রশাসনসচিব ফয়েজ আহমদ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি মাঠ প্রশাসনকে সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী সাজাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ দিয়েছে শুনেছি। অভিযোগ কমিশনের টেবিলে তোলা হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
কর্মকর্তাদের তালিকাসংবলিত পৃথক ১৩টি অভিযোগে সই করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এসব অভিযোগ ইসি সচিবালয়ের সচিবের কাছে জমা দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য পুলিশের দলবাজ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য বলেছি। যাঁরা সমতল মাঠকে অসমতল করার কাজে ব্যস্ত; তাঁদের নাম, পদবি, কর্মস্থলসহ সকল তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দিয়েছি।’

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আজকে লিখিতভাবে সব তথ্যপ্রমাণসহ দিয়ে গেলাম। গণহারে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এঁদের সঙ্গে জনপ্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদেরও প্রত্যাহার চাওয়া হয়েছে।’

যাঁদের প্রত্যাহার চায় ঐক্যফ্রন্ট
ঐক্যফ্রন্টের তালিকায় থাকা জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা হলেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া।

১৭ জেলা প্রশাসকদের মধ্যে আছেন ভোলার মাসুদ আলম সিদ্দিকী, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসাইন, ফেনীর মো. ওয়াহিদুজ্জামান, কুমিল্লার মো. আবুল ফজল মীর, লক্ষ্মীপুরের অঞ্জন চন্দ্র পাল, কিশোরগঞ্জের সারোয়ার মোরশেদ চৌধুরী, নরসিংদীর সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, টাঙ্গাইলের মো. শহীদুল ইসলাম, ঝিনাইদহের সরোজ কুমার নাথ, খুলনার মো. হেলাল হোসাইন, কুষ্টিয়ার আছলাম হোসাইন, নড়াইলের আঞ্জুমান আরা, ময়মনসিংহের শুভাস চন্দ্র বিশ্বাস, নওগাঁর মিজানুর রহমান, জয়পুরহাটের জাকির হোসাইন, রাজশাহীর এস এম আবদুল কাদের ও সিলেটের এমদাদুল হক।

পুলিশ কর্মকর্তারা
ঐক্যফ্রন্টের তালিকায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তা আছেন তাঁরা হলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত আইজিপি (টেলিকম) ইকবাল বাহার, নৌ পুলিশের ডিআইজি শেখ মারুফ হোসেন, সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান, চট্টগ্রামের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, খুলনার ডিআইজি দিদার আহম্মেদ, রাজশাহীর ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হুমায়ন কবির, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবুর রহমান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম, এসবির ডিআইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া, রংপুরের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, পুলিশ সদরের পুলিশ সদরের ডিআইজি (অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার, পুলিশ সদরের ডিআইজি (ট্রেনিং) খন্দকার মহিদ উদ্দিন, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন, অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, খুলনার অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম, সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, ঢাকার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান, ডিএমপির উপকমিশনার হারুন অর রশিদ, মারুফ হোসেন সরদার, খন্দকার নুরুন নবী, এস এম মুরাদ আলী ও সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান, সিএমপির উপকমিশনার এস এম মেহেদী হাসান ও ফারুকুল হক, কাউন্টার টেররিজম বিভাগের ডিসি প্রলয় কুমার জোয়ারদার প্রমুখ।

তালিকায় এসপিদের মধ্যে আছেন ঢাকার শাহ মিজান শফিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জের আনিসুর রহমান, মুন্সিগঞ্জের যায়েদুল আলম, নরসিংদীর মো. মিরাজ, টাঙ্গাইলের সঞ্জিত কুমার রায়, মাদারীপুরের সুব্রত কুমার হাওলাদার, ময়মনসিংহের শাহ আবিদ হোসেন, শেরপুরের আশরাফুল আজিম, সিলেটের মো. মনিরুজ্জামান, বরিশালের সাইফুল ইসলাম, ভোলার মোক্তার হোসেন, খুলনার এস এম শফিউল্লাহ, সাতক্ষীরার মো. সাজ্জাদুর রহমান, বাগেরহাটের পঙ্কজ চন্দ্র রায়, যশোরের মঈনুল হক, ঝিনাইদহের মো. হাসানুজ্জামান, কুষ্টিয়ার আরাফাত তানভীর, চট্টগ্রামের নুরে আলম মিনা, নোয়াখালীর ইলিয়াস শরীফ, ফেনীর এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, কুমিল্লার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, রংপুরের মিজানুর রহমান, দিনাজপুরের সৈয়দ আবু সায়েম, ঠাকুরগাঁওয়ের মনিরুজ্জামান, রাজশাহীর মো. শহিদুল্লাহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোজাহিদুল ইসলাম, নওগাঁর ইকবাল হোসেন, নাটোরের সাইফুল্লাহ, বগুড়ার আশরাফ আলী, সিরাগঞ্জের টুটুল চক্রবর্তী ও পাবনার রফিক ইসলাম।

পুলিশের উদ্বেগ ও কমিশনের আশ্বাস
গতকাল বেলা পৌনে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ইসির সম্মেলনকক্ষে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদত হোসেন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী এবং দুই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সভায় এসপিরা ভোটের আগে তাঁদের বদলি বা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিরোধী দল থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলোকে ঢালাও উল্লেখ করে একাধিক এসপি বলেন, বদলি বা প্রত্যাহার-আতঙ্ক মাথায় নিয়ে কাজ করা যায় না। এসব ঢালাও অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না।

দেশের উত্তরাঞ্চলের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর এলাকায় ৪৫টি ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। এই কর্মকর্তা নির্বাচনের সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) পুলিশ সুপারের অধীনে রাখার প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেন।

বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া ‘গায়েবি মামলা’ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ঢাকার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই।

বিরোধী রাজনৈতিক জোটের পক্ষ থেকে জনগণকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানানোর কথা উল্লেখ করে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এসব বক্তব্য যাঁরা দেন, তাঁদের সতর্ক করা উচিত।
বিরোধী দলের চলমান কর্মসূচিকে ইঙ্গিত করে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে ইসি থেকে পুলিশের চলমান কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তারা (বিরোধী দল) একবার ‘ফ্রন্টলাইনে’ এসে গেলে মাঠ তাদের দখলে চলে যাবে। তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের গুজবের কথা উল্লেখ করে ঢাকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে ভোটের সময় ফেসবুকের ওপর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
সভায় উপস্থিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নিকট অতীতের নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তিনি পুলিশ বাহিনীকে নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করার পরামর্শ দেন।
তবে সিইসি ও অন্য তিন কমিশনার পুলিশ বাহিনীকে আশ্বস্ত করে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢালাওভাবে অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে না।

কমিশনার রফিকুল ইসলাম পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘হতাশার কিছু নেই। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করে যান।’

গোপন সূত্র ব্যবহার করুন
সভায় শুরুতে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন সিইসি নুরুল হুদা। সেটা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। তাতে গণমাধ্যমকর্মীদের থাকার সুযোগ ছিল না।

সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করবেন না। এই দায়িত্ব আপনাদের আমরা দিইনি। এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যাঁরা ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, তাঁরা বিব্রত হন। আমরা এটা চাই না। কারও ব্যাপারে যদি তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়, তবে গোপন সূত্র ব্যবহার করে সংগ্রহ করতে পারেন।’

পরোয়ানায় গ্রেপ্তার নয়
সিইসি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা করবেন না। কারও বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেপ্তার করা যাবে না। আশা করি, আপনারা এটা করছেনও না।’

নুরুল হুদা বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে শুরুতে ৪ থেকে ৫ হাজার জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওই সব মামলা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের। আর এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে করা মামলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিএনপির পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তাই ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশের কারণে ভোট যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কারণে যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সব দল অংশ নেবে। প্রজাতন্ত্রের সবাইকে নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। আর এই দায়িত্বের সিংহভাগ থাকে পুলিশের ওপর।

সিইসি বলেন, সংবিধানমতে কর্তৃত্ব নয়, বিবেকমতো কাজ করতে হবে। নির্বাচন যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশন তাদের কর্মকাণ্ডে নজরদারি করবে। ইতিমধ্যেই অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে। তবে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভালোভাবে যাচাই না করে কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।