তৎপরতায় এগিয়ে অর্ধ শতাধিক নতুন মুখ

কামরুজ্জামান খান, শহীদুল্লাহ মুহাম্মদ
কামরুজ্জামান খান, শহীদুল্লাহ মুহাম্মদ

জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দলের ১২৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন।

কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলার ৬টি সংসদীয় আসনে শতাধিক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে আলোচনা ও তৎপরতায় এগিয়ে অর্ধশতাধিক নতুন মুখ।

প্রবীণেরা হিসাবনিকাশ করে ধীরগতিতে এগোচ্ছেন। আর নতুন ও তরুণ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে গ্রামগঞ্জে ঘুরে উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, প্রচারপত্র বিলিসহ নানা প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিচ্ছেন। আকৃষ্ট করছেন নতুন ভোটারদের।

জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দলের ১২৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫৮ জন, বিএনপির ৪৩ জন, জাতীয় পার্টির ১৭ জন ও অন্যান্য ৮ জন।

বর্তমানে জেলায় মোট ভোটারসংখ্যা রয়েছে ২১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৫০০। পাঁচ বছরে ভোটার বেড়েছে তিন লাখের বেশি। নতুন মনোনয়নপ্রার্থী ও নতুন ভোটাররা এ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবেন বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণ।

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনটি নিয়ে জেলার ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। এ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এখানে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা চারবারের সাংসদ আওয়ামী লীগের সাবেক ওই সাধারণ সম্পাদক। এর আগে এ আসনে আশরাফুলের সম্মানার্থে কাউকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ বা জমা দেওয়ার কথা শোনা যায়নি। কিন্তু এবার তিনি অসুস্থ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ায় তাঁর নিকটাত্মীয়সহ অন্তত ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। প্রার্থী হিসেবে সবাই নতুন মুখ।

তবে সৈয়দ আশরাফুলের অসুস্থতা নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই ভিন্নমত রয়েছে। ৪ নভেম্বর কিশোরগঞ্জে জেল হত্যা দিবসের এক আলোচনায় সভায় সৈয়দ আশরাফুলের ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম বলেন, তাঁর ভাই আশরাফুল গুরুতর অসুস্থ। তাঁর ফুসফুসের ক্যানসার চতুর্থ ধাপে চলে গেছে। তিনি কাউকে চিনতে পারছেন না। এমনকি তাঁর (আশরাফুল) মেয়েকেও না। এমতাবস্থায় তাঁর রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে এ ব্যাপারে সাফায়েতুলের বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন আশরাফুলের চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আশরাফুল ভাই আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ। তাই আমরা আশা করছি তিনি আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন ও রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।’

এখানে সৈয়দ আশরাফুল ছাড়াও আরও ১০ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন আশরাফুলের দুই সহোদর মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ও ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেজ ছেলে রাসেল আহমেদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সম্পাদক কৃষিবিদ মশিউর রহমান, সদর পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শরীফ সাদী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) জেলা শাখার সভাপতি দীন মোহাম্মদ, বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহমহিলাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলসান আরা ও বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহপাঠাগার সম্পাদক অধ্যক্ষ এম এ হান্নান। এ ব্যাপারে গোলসান আরা বলেন, এ আসনে সৈয়দ আশরাফুলের ভাইয়েরাসহ অন্যরা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বলে তিনিও দিয়েছেন। তবে তাঁদের প্রত্যাশা শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফুলই এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। আর এটাই হবে সবার জন্য মঙ্গলজনক। অপর দিকে এ আসন থেকে বিএনপিরও ১১ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এতেও আসতে পারে নতুন মুখ, যা চমক সৃষ্টি করবে বলে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ- ৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসন থেকে আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক হিসেবে এ আসন থেকে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে। এ আসনে এটা তাঁর প্রথম নির্বাচন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০–দলীয় জোটের অংশ হিসেবে ও একটি দলের প্রধান হিসেবে আশা করি এ আসন থেকে মনোনয়ন পাব।’

তবে নতুন ও তরুণ নেতাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে নেতাদের তৎপরতা অনেক দিন থেকেই লক্ষ করা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য শহীদুল্লাহ মুহাম্মদ শাহ নূর, নিকলী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাজি মো. মাসুক মিয়া, উপজেলা বিএনপির আরেক সহসভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও জেলা বিএনপির সদস্য বদরুল আলম দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এ ছাড়া জেলায় বিভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নতুন তরুণ মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নতুন ভোটাররাও তাঁদের নিয়ে দিকে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।