মনোনয়নপ্রত্যাশী ১২ জন, আছে দলীয় বিভক্তি

আবদুস সালাম,আতাউর রহমান ঢালি,আতিকুল ইসলাম মতিন
আবদুস সালাম,আতাউর রহমান ঢালি,আতিকুল ইসলাম মতিন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন ঢাকা-১৩ আসনের বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা বলছেন, কোন্দল অব্যাহত থাকলে নির্বাচনে বিপাকে পড়তে পারে দল।

মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার একাংশ নিয়ে ঢাকা-১৩ আসন। ২০০৮ সালে এই আসনে বিএনপির হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এবার তিনি এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।

দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, এবার এই আসন থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম ও আতাউর রহমান ঢালি, দলের সহশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহসভাপতি আতিকুল ইসলাম মতিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রহমান, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনায়েতুল হাফিজ, শেরেবাংলা নগর থানার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আফতাব উদ্দিন জসিম, আদাবর থানার সাবেক সভাপতি আবুল হাশেমসহ ১২ জন দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। তবে আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালি ও আতিকুল ইসলাম মতিন—এই তিনজনের মধ্যে একজনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই তিনজনের নেতৃত্বেই ঢাকা-১৩ আসনের বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

আবদুস সালামের অনুসারীদের দাবি, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই-আড়াই বছর আগে থেকে মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারণার কাজ করছেন আবদুস সালাম। কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে অন্য দুই সম্ভাব্য প্রার্থীর অনুসারীরাও দলীয় মনোনয়ন নিজেদের পক্ষে আসবে বলে দাবি করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আদাবর ও মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির শীর্ষ নেতারা আবদুস সালামের অনুসারী। তাঁর পছন্দ অনুযায়ীই এই দুই থানার কমিটি হয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ড ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অধিকাংশ তাঁর বিরোধী।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতিতে কারাবন্দী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। বিএনপির স্থানীয় অঙ্গসংগঠনগুলোতে তাঁর ব্যাপক প্রভাব। মূলত ইমামুল হাসানের সঙ্গে আবদুস সালাম ও আতিকুল ইসলাম মতিনের দূরত্বই স্থানীয় রাজনীতিতে বিভক্তির কারণ। বিভিন্ন থানা ও ইউনিট কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এই দূরত্ব তৈরি হয়, যা এখনো আছে।

জানা গেছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী আতাউল ইসলাম ঢালি সম্পর্কে ইমামুল হাসানের মামা। তাই তাঁর স্থানীয় অনুসারীদের সবাই আতাউল ইসলাম ঢালির সঙ্গে আছেন। অন্যদিকে লালমাটিয়া এলাকার সাবেক কমিশনার আতিকুল ইসলাম মতিন দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়। ঢাকা-১৩ আসনের ৮টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের শীর্ষ নেতারা তাঁর অনুসারী। তবে কয়েকজনের সঙ্গে ইমামুল হাসানেরও ঘনিষ্ঠতা আছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে যুবদলের স্থানীয় এক নেতা  বলেন, সম্ভাবনায় এগিয়ে থাকা তিন প্রার্থীর মধ্যে আতিকুল ইসলাম মতিনকেই তিনি এগিয়ে রাখবেন। কারণ, তিনি দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পুরো এলাকাতেই তাঁর ভালো যোগাযোগ আছে। তিনি বলেন, দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। কারণ, সম্ভাব্য যেকোনো এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে অন্যরা রুষ্ট হতে পারেন। তাঁরা প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। দলীয় নেতারা বলছেন, কোন্দলের পাশাপাশি স্থানীয় প্রায় প্রত্যেক নেতাই একাধিক মামলার আসামি। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে স্থানীয় নেতাদের অধিকাংশ রাতে নিজেদের বাসায় ঘুমাতে পারেন না।

জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, ‘দলীয় চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় দুই বছর থেকে ঢাকা-১৩ আসনে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এখানে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করছেন। মনোনয়ন ফরম তোলা ১২ জনের মধ্যে ৫ জনই থানা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের সময় তাঁরা আমার পক্ষেই কথা বলেছেন।’