মাঠে ছিলেন না, তবে ভোটে থাকতে চান

আতিকুর রহমান ও সমশের মবিন
আতিকুর রহমান ও সমশের মবিন

সিলেটের দুটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছেন দুজন প্রার্থী। তাঁরা হচ্ছেন বিকল্পধারার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সমশের মবিন চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আতিকুর রহমান। এলাকায় প্রচার রয়েছে, মহাজোটের ব্যানারে এই দুজন প্রার্থী যথাক্রমে সিলেট-৬ ও সিলেট-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন।

সিলেট-৬ আসনের বর্তমান সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সমশের কখনোই এলাকায় গণসংযোগ কিংবা প্রচারণায় অংশ নেননি। আর সিলেট-৩ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। এই আসন থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা নিয়ে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণসংযোগ চালিয়েছিলেন আতিকুর। এরপর থেকে তিনি ভোটের মাঠে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। প্রায় এক দশক পর ভোটের মাঠে তাঁর নাম এল।

জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, মাঠে তাঁরা (সমশের ও আতিকুর) কখনোই ছিলেন না। এখন উড়ে এসে জুড়ে বসে ভোটে লড়তে চাইছেন। ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এমনটা হলে সেটা মেনে নেওয়াটা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জন্য খুবই কষ্টকর হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সমশের মবিন চৌধুরী মূলত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হয়েছিলেন। তবে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ ও রাজনীতি থেকেও অবসর নেন। তাঁর এই হঠাৎ অবসরের পেছনে সরকারের চাপ রয়েছে বলে তখন খোদ বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছিলেন।

একই সূত্রে জানা গেছে, এরপর সমশের মবিন চৌধুরী দীর্ঘদিন রাজনীতিতে চুপচাপ ছিলেন। সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারায় যোগ দেন। আগামী নির্বাচনের আগে মহাজোটের সঙ্গে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে বলে প্রচার রয়েছে। অথচ এর আগে কখনোই তাঁকে সিলেট-৬ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, প্রচারণা কিংবা সভা-সমাবেশে অংশ নিতে দেখা যায়নি।

সমশের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ি গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে। এলাকার মানুষজন ও আমার শুভানুধ্যায়ীরা চাইছেন আমি যেন সিলেট-৬ থেকে নির্বাচনে অংশ নিই। তাঁদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই এই আসনে নির্বাচন করতে চাইছি। আগে গণসংযোগ করিনি বলে নির্বাচন করা যাবে না, এটা তো নয়। মানুষের সঙ্গে আমার সব সময়ই যোগাযোগ ছিল, এটিই হলো বড় কথা।’

>বিকল্পধারার মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বিএনপিত্যাগী সমশের মবিন। আবার সিলেট-৩ আসনে জাপা নেতা আতিকুরের নাম।

জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সিলেট-৩ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন আতিকুর রহমান। বড় কোনো ধরনের মেরুকরণ না ঘটলে তিনিই মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন। এ অবস্থায় দলগতভাবে তাঁরা প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, আতিকুর সিলেট-৩ আসনের পাশাপাশি হবিগঞ্জ-৩ (সদর ও লাখাই) আসনেও নির্বাচন করার অভিপ্রায়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

আতিকুর ১৯৯১ সালে সিলেট-৩ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালেও তিনি এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে সেবার মহাজোটের সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর থেকে আতিকুরকে আর এলাকায় খুব একটা সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি।

আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিষ্ক্রিয় ছিলাম, এটি সত্য নয়। ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আমি সিলেট বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে মাঠপর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। যেখানে নেতা-কর্মী ও সংগঠন ঝিমিয়ে পড়ছিল, সেখানে কাজ করে সংগঠনকে চাঙা করেছি। সিলেট-৩ আসনে আমি আগেও নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। এখানকার মানুষের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে অবশ্যই বিজয় নিশ্চিত হবে। আমি আশা করছি, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া সমন্বয় রাখতে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র বলছে, সিলেট-৬ ও সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন চাওয়াকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে। সিলেট-৬ আসনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ছাড়াও দলের ১১ জন নেতা-কর্মী দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। সিলেট-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এককাট্টা হয়েছেন। সেই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আটজন।

মাঠে নেই কিন্তু ভোটে আছেন—এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট মহানগরের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান প্রথম আলোকে বলেন, এখনো আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এর আগে কোন আসন কোন শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়া হবে, সেটা বলাও ঠিক নয়। যেহেতু মহাজোটের ব্যানারে অনেক শরিক দল রয়েছে, তাই সেসব দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন চাইবেন, এটা স্বাভাবিক। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সব দিক বিচার-বিবেচনা করে প্রার্থী নির্ধারণ করবেন, তাঁর মনোনীত প্রার্থী যে-ই হোন, ওই প্রার্থীর পক্ষে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।