ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ, ঢাকায় তাকিয়ে বিএনপি

ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে ততই নির্বাচনী আলোচনা। সন্ধ্যা নামলেই জমে ওঠে চায়ের টেবিল। আলোচনা হয় প্রার্থী নিয়ে, নির্বাচন নিয়ে। মাগুরা-১ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলের নেতা-কর্মীরাই।

এই আসনে বর্তমান সাংসদ সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আবদুল ওয়াহহাব। তাঁকে সরিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখরকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রোববার সকালে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই সাইফুজ্জামানকে অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে জেলা ছাত্রলীগ। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুণ্ডু জানিয়েছেন, দল মনোনীত প্রার্থী সাইফুজ্জামান শিখরকে নিয়ে স্থানীয় কর্মীদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। সবাই কাজ করবেন নৌকার পক্ষে।

আগে থেকেই জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আছেন শিখরের পক্ষে। তাঁর পক্ষে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের সভাপতি মীর মেহেদি হাসান রুবেল বলেন, সাইফুজ্জামান শিখরের পক্ষে নিয়মিত প্রচার চালিয়ে আসছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এখন তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় চলমান এই প্রচার-প্রচারণা আরও বেগবান হবে।

এদিকে প্রার্থী নিশ্চিত না হওয়ায় এখনো মাঠে নামেনি বিএনপি। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বেশির ভাগই অবস্থান করছেন ঢাকায়। আর তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানকার বিএনপি প্রধানত দুটি ধারায় বিভক্ত। শহরে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ও দুটি। গত শনিবার সন্ধ্যায় ভায়নার মোড়ে অবস্থিত বিএনপির কার্যালয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খান হাসান ইমাম সুজা বলেন, আপাতত সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি ও দলীয় কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করছেন তাঁরা। অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন যিনি পাবেন, তাঁর পক্ষে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন নেতা-কর্মীরা। গত শুক্রবার জেলার সব ইউনিটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ ঐকমত্য আসে।

শহরের ইসলামপুরপাড়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও আড্ডা দিচ্ছেন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। তাঁদের কাছে ভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সবাই বলেন, এখন কে মনোনয়ন পাবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম শেলি ও আলী তারেক বলেন, কদিন আগেও এই কার্যালয় বন্ধ ছিল। গ্রেপ্তার-আতঙ্কে কর্মীরা এখনো কার্যালয়ে আসার সাহস পাচ্ছেন না। তাঁরাও বসছেন আতঙ্ক নিয়ে। তবে প্রার্থী নিশ্চিত হলে সবাই একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলে মনে করেন তাঁরা।

মাগুরা সদরের একটি পৌরসভা, নয়টি ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসন। ১৯৯১ সালে সর্বশেষ এই আসন থেকে বিএনপির সাংসদ নির্বাচিত হন প্রয়াত মজিদ উল হক। এরপর টানা চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন প্রয়াত মো. সিরাজুল আকবর। ২০১৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে আসেন মুক্তিযুদ্ধের সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আবদুল ওয়াহহাব।