'ভোট গরিবর লাগি না'

ভোরের হালকা কুয়াশা। চিরচেনা হইচইয়ের পরিবর্তে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা চত্বরে সুনসান নীরবতা। সকালের আলো যত বাড়ে, লোকজনের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। মূলত শ্রমজীবী মানুষের ভিড়। অনেকের হাতেই টুকরি ও কোদাল। যাঁর যাঁর মতো করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত।

ভিড়ের মধ্যে হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলার লোকজন। সবার চোখ নতুন কোনো আগন্তুকের দিকে। যিনি কাজের জন্য লোক নিতে এসেছেন। ছোট ছোট ভিড়ের কাছে গেলে অনেকেই মনে করেন হয়তো লোক লাগবে। উদ্দেশ্য ভিন্ন জানতে পেরেই অনেকে সরে যান। তবে সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা শুরু করতেই আবার হালকা ভিড় জমতে থাকে। যাঁর যাঁর মতো মন্তব্য করতে থাকেন। অনেকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে শোনেন।

হবিগঞ্জের আবদুল্লাহ মিয়া। ভোটের প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘আমরার অইলো পেটনীতি আগে। গরিবর চিন্তা তো আগে এইটাই। রুজি–রোজগার করা। চাইরবার ভোট দিছি। এটা বুঝছি ভোট গরিবর লাগি না। গরিবর ভালা লইয়া কেউর অত ভাবনাচিন্তা নাই। ভোট নিয়া চিন্তা অইলো নেতারার।’ তবে কি ভোট দেবেন না? এমন প্রশ্নে আবদুল্লাহ মিয়া বলেন, ‘না, ভোট দেওয়াত যাইমু। তবে অখনো ভোট নিয়া কোনো চিন্তা নাই। ভোটর সময় দেখমু, কারে দেওয়া যায়।’

পাশে দাঁড়িয়েই ছোট ছোট মন্তব্য করছিলেন হবিগঞ্জের মো. ছইদ খান। চার দিন আগে কাজের খোঁজে মৌলভীবাজার এসেছেন তিনি। ভোটের কথা তুললে বললেন, ‘ভোট আইছে হুনছি। তবে ভোট নিয়া কোনো চিন্তাভাবনা নাই। আমরার চিন্তা অইলো দিন হাজিরায় কাম করতাম। আমরার টাকার প্রয়োজন। ভোট নিয়া ভাববার সময় কই?’ তিনি জানালেন, ভোট নিয়ে যেমন তাঁর কোনো ভাবনা নেই, তেমনি কোনো পছন্দও নেই। ভোট দিতে যাবেন। তখন যাঁকে মনে হবে এলাকার জন্য উন্নয়ন করতে পারবেন, তাঁকে বেছে নেবেন।

হবিগঞ্জের বাহুবল এলাকার আবদুল জলিল বলেন, ‘ইলেকশন আইছে জানি। কাজে ব্যস্ত থাকি। বেশি খোঁজখবর রাখি না। মনে মনে মার্কা আছে। ভোটের সময় যে দল আগুয়ান থাকে, তারে সাপোর্ট করমু। এমনে কোনো দল করি না।’

এলোমেলো কথা হয় আরও অনেকের সঙ্গে। ভোট নিয়ে অনেক রকম বিশ্লেষণ। কেউ বলেন, ভোট দিয়ে কিছু হয় না। যে ক্ষমতায় যায়, তারই লাভ। ভোটের পরে কেউ কাউকে চেনে না।

কাউছার মিয়া বলেন, ‘যারে ভোট দেওয়া অয়, গদিত বওয়ার পরে অন্যদের দিকে আর খেয়াল থাকে না তার। এরপরও ভোট একটা দেওয়া লাগে।’

বিধু দাসের সাফ কথা, ‘ভোট দিয়া উপকার আশা করি না। লাভ-লোকসানের ধার ধারি না। যত সরকার পাইলাম একতাও (একই)। তারারই (যাদের ভোট দেওয়া হয়) পেট ভরে না। আমরা অইলাম শ্রমিক। মাটি কাটিয়া ভাত খাওয়া লাগে।’

চৌমোহনা চত্বরে অন্তত ২০-২৫ জন শ্রমিকের সঙ্গে ভোট নিয়ে কথা হলো। সবার কথা প্রায় কাছাকাছি। তাঁরা দিনমজুরি করে যা পান, তাই দিয়ে সংসার চালান। ভোট নিয়ে তাঁদের আলাদা ভাবনা এখনো নেই। তারপরও তাঁদের অনেকেই ভোট দিতে বাড়িতে যাবেন।