মোমেন-ইনাম লড়াই?

সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে যে দলের প্রার্থী জেতেন, সে দলই ক্ষমতায় যায়—এমন কথার প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। ১৯৯১ সালে বিএনপি, ’৯৬-তে আওয়ামী লীগ, ২০০১–এ আবার বিএনপি এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে অবশ্য ‘একতরফা’ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

মর্যাদার এই আসনে এবার কে জিতবেন? আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী কারা? এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট-১ আসন নিয়ে বরাবরের মতোই রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নানা আলোচনা চলছে। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ এ আসনে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেনের নাম ঘোষণা করেছে। মোমেন এ আসনের বর্তমান সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই। অর্থমন্ত্রী রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছিলেন কয়েক বছর ধরে।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পর এখন নগরবাসীর দৃষ্টি বিএনপির দিকে। সাইফুর রহমান মারা যাওয়ার পর বিএনপি এখানে ভালো প্রার্থী পাচ্ছিল না। এবার বেসরকারীকরণ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন চাওয়ায় এখানে নির্বাচনী আলোচনা জমে উঠেছে। এই দলে তিনি ছাড়াও দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সদস্য শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আরিফ আহমদ মোমতাজও মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে ইনাম আহমদ চৌধুরীই মনোনয়ন পাবেন বলে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগে আবদুল মোমেন ছাড়াও আরও তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁরা হচ্ছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে না পারলে দলীয় প্রার্থীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছেন ওয়ার্ড পর্যায়ের কয়েকজন নেতা-কর্মী।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচন, প্রার্থিতা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে। তবে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ভোট দেওয়ার বেলায় নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা নৌকার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ।

এ আসনে গত প্রায় পাঁচটি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, যে দলের প্রার্থী জেতেন, সেই দলই ক্ষমতায় যায়। ’৯১ সালে বিএনপির প্রয়াত খন্দকার আবদুল মালিক সাংসদ হয়েছিলেন। তখন সরকার গঠন করেছিল বিএনপি। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রয়াত স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জিতেছিলেন। সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান জয়ী হন এবং সরকারে আসে বিএনপি। ২০০৮-এর নির্বাচনে জয়ী হন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘যে দলের প্রার্থী জেতেন, সে দলই ক্ষমতায় যায়’—এ কথা চালু থাকার কারণে সিলেটে সব সময় আলোচিত প্রার্থীরা মনোনয়ন পান। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষেরও দৃষ্টি এ আসনের দিকে থাকে। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে সব শেষ।

বর্তমান সাংসদ আবুল মাল আবদুল মুহিত বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হচ্ছেন না। এ অবস্থায় প্রায় তিন বছর ধরে সিলেটে অর্থমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অংশ নিতে দেখা গেছে তাঁর ছোট ভাই আবদুল মোমেনকে। গতকাল বিকেলে তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম, আমিই মনোনয়ন পাব। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় আমি খুবই খুশি। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ তিনি এ জন্য অর্থমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান।