একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবিতে গতকাল রোববার ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেটের তিনটি আসনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন দলটির স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ আবদুস সাত্তার, ফরিদপুর-২ আসনের বর্তমান সাংসদ সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সিলেট–২ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর সমর্থকেরা এই বিক্ষোভ করেন।
এদিকে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের বর্তমান সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ আফাজ উদ্দীনকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁর সমর্থকেরা। এসব বিক্ষোভের সময় মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঢাকার বাইরে থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশা। এ আসনের বর্তমান সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরী। তিনি ২০১৪ সালে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন। সেবার দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আফাজ উদ্দিন। বর্তমান সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা সন্ধ্যায় আল্লারদর্গা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আর দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আফাজ উদ্দীন মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর নেতা-কর্মীরা বিকেল চারটার দিকে কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আফাজ উদ্দীন মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেন। সড়কে টায়ার ও কাঠ জ্বালিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দেড় ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবিতে গতকাল ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। চার ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীরা সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সাত্তারের সমর্থক বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে আবদুস সাত্তারের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ফরিদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মনোনয়ন পাচ্ছেন না—এমন খবরে গতকাল বিকেলে নগরকান্দা উপজেলার জয়বাংলায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁর সমর্থক ও দলের নেতা–কর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাজেদা চৌধুরীর বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারণে এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাচ্ছেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সাল। ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা এবং পাশের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসন। নগরকান্দার চরযশোরদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান, কাইচাইল ইউপির চেয়ারম্যান কবির হোসেন ঠান্ডু, বল্লভদী ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা সাজেদা চৌধুরীর পক্ষে নানা স্লোগান দেন। বিক্ষুব্ধ নেতারা বলেছেন, সাজেদা চৌধুরী ছাড়া ফরিদপুর-২ আসনে অন্য কাউকে মেনে নেওয়া হবে না।
সিলেট–২ আসনের (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির ইয়াহ্হিয়া চৌধুরী। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবিতে গতকাল সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রশিদপুরে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন দলটির স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। সাবেক সাংসদ ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর সমর্থনে তাঁরা বিক্ষোভ করেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পংকি খান বলেন, শফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন নেতা–কর্মীরা।
এদিকে নাটোর–১ আসনে বর্তমান সাংসদ মো. আবুল কালাম মনোনয়ন পাননি। এ সংবাদ পেয়ে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর পাঁচ সমর্থককে মারধর করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।