সুনামগঞ্জে ঘুরেফিরে পুরোনোদের হাতেই নৌকা

সুনামগঞ্জে এবারও নৌকা পেয়েছেন তাঁরা। বাঁ থেকে এম এ মান্নান, মুহিবুর রহমান মানিক, জয়া সেনগুপ্তা, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। ছবি: সংগৃহীত
সুনামগঞ্জে এবারও নৌকা পেয়েছেন তাঁরা। বাঁ থেকে এম এ মান্নান, মুহিবুর রহমান মানিক, জয়া সেনগুপ্তা, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ জেলায় নির্বাচনী আসন পাঁচটি। এর মধ্যে চারটির বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের এবং একটি জাতীয় পার্টির। যে আসনটি জাতীয় পার্টির, সেটিতেও এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ার দাবি ছিল। তাই পাঁচটি আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অন্তত ৫০ জন। এর মধ্যে নতুন মুখ ছিলেন অনেকেই। কিন্তু এসব জল্পনাকল্পনা বাস্তবে রূপ নেয়নি। জেলার চারটি আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পুরোনোরাই। 


তবে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এই আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। তিনিই এখানে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন—এটা নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।

সুনামঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা) বর্তমান সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তিনি এবার মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরও ১২ জন। এর মধ্যে নতুন মুখ ছিলেন অনেকেই। তাঁদের আশা ছিল, এবার হয়তো এখানে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি না হওয়ায় তাঁদের অনেকেই হতাশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, ‘১৮ বছর ধরে মাঠে আছি। গ্রামে গ্রামে দলকে সংগঠিত করেছি। গত দুটি সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। নতুনদের সুযোগ না দিলে নতুন নেতৃত্বের বিকাশ কীভাবে হবে।’

সুনামগঞ্জ-২ আসনের (দিরাই ও শাল্লা) বর্তমান সাংসদ জয়া সেনগুপ্তা। এই আসনের সাবেক সাংসদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর গত বছরের ২৯ মার্চ উপনির্বাচনে তিনি এখানে সাংসদ নির্বাচিত হন। এবার এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ছিলেন আরও সাতজন। তাঁদের অনেকেরই দাবি ছিল প্রার্থী পরিবর্তনের। কিন্তু শেষমেশ জয়া সেনগুপ্তার হাতেই নৌকা থাকল।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) বর্তমান সাংসদ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এবার এখানে এম এ মান্নান ছাড়াও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরও ছয়জন। এই আসনের সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ (ডন) গত দুটি নির্বাচনে এখানে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন। এবারও তাঁর নামটি বেশ জোরেশোরেই আলোচনায় ছিল। কিন্তু শেষমেশ নৌকা এম এ মান্নানের হাতছাড়া হয়নি।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবার এখানে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবি আছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন দলের জেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন, সহসভাপতি খায়রুল কবির রুমেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ শামছুন্নাহার বেগম শাহানা। কিন্তু এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। শেষমেশ আসনটি যদি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার হয়, তাহলে মতিউর রহমান এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান। এ জন্য তিনি আসনটি উন্মুক্ত করে দিতে দলের সভানেত্রীর কাছে আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনের (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) বর্তমান সাংসদ মহিবুর রহমান মানিক। এই আসন থেকে তিনবার সাংসদ হয়েছেন তিনি। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এবার মনোনয়ন লড়াইয়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও পাঁচজন। কিন্তু সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে মানিকই নৌকা পেয়েছেন।