ফৌজদারি কার্যবিধিতে দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই

>খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে না: রাষ্ট্রপক্ষ

ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসারে দণ্ড (কনভিকশন) স্থগিতের সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আবেদন খারিজ করে আজ সোমবার এই পর্যবেক্ষণ দেন।

এক মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড, সাজা ও জরিমানা স্থগিত চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলাম ওই আবেদনটি করেছিলেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা পর্যালোচনা দেখা যায়, এখানে দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই। আদালত বলেছেন, দণ্ড হচ্ছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, যেখানে একজন বিচারক কাউকে কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সিদ্ধান্ত দেন, সেখানে দোষী হলে শাস্তি হিসেবে সাজা দেওয়া হয়। দণ্ড (কনভিকশন) ও সাজা দুটি ভিন্ন বিষয়। যেহেতু আবেদনকারী (ফখরুল ইসলাম) জামিনে আছেন, তাই সাজা স্থগিতের প্রশ্ন আদৌ নেই। ওই আবেদনটি ভ্রান্ত ধারণা প্রসূত অভিহিত করে হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ফখরুল ইসলামের জরিমানা স্থগিত করেছেন আদালত।

এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না এই প্রসঙ্গ এখন আলোচনায়। এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, হাইকোর্টের এই আদেশে অন্য দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ফলে খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না।

সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের খসড়া ফাঁসের মামলায় ২০১৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে আইনজীবী ফখরুল ইসলামের ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ফখরুল, যা গেল বছরের ২৬ জানুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। এই আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ফখরুল জামিন চেয়ে আবেদন করলে গত বছরের ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। এরপর দণ্ড, সাজা ও জরিমানা স্থগিত চেয়ে ফখরুল হাইকোর্টে আবেদনটি করেন, যা আজ খারিজ হলো।

আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ফখরুল ইসলাম নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ, নূসরাত জাহান ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ।
পরে ফরহাদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দণ্ড অর্থ হচ্ছে দোষী সাব্যস্ত হওয়া। ফখরুল ইসলাম বিচারিক আদালতের দণ্ড, সাজা ও জরিমানা স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করেছিলেন। হাইকোর্ট জরিমানা স্থগিত করে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে তাঁর দণ্ড ও সাজা বহাল আছে। হাইকোর্টের এই আদেশে অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আর সাজা যদি স্থগিত হতো তাহলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আসছে নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায়ের আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন এবং সংবাদকর্মীদের রায়ের খসড়া কপি দেখান।

এ ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর সেগুনবাগিচার কার্যালয় থেকে আইনজীবী ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট সাকা চৌধুরীর স্ত্রী, আইনজীবী ফখরুলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। এই মামলায় ২০১৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। রায়ে সালাউদ্দিনের আইনজীবীসহ পাঁচ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা হয়েছে। সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলে খালাস পান।