আসন ছাড়ে সন্তুষ্ট নয় আ.লীগের মিত্ররা

>
  • আ.লীগ–জাপা কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি
  • জাপা চাইছে ৪৭ আসন, এর ১৪টিতে আ.লীগ প্রার্থী দিয়েছে
  • ১৪ দলের শরিকেরা হতাশ, ইসলামী ঐক্যজোট অনিশ্চিত

আওয়ামী লীগ জোটের শরিক ও মিত্রদের যে সংখ্যক আসন ছাড় দিতে চায়, তাতে কেউ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এ কারণে গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে গিয়েও পিছিয়ে এসেছে ক্ষমতাসীন দল। যদিও দলটির নেতারা এটাকে ​নির্বাচনী ‘কৌশল’ বলে দাবি করছেন।

গত রোববার থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি দেওয়া শুরু করে। গতকাল সোমবার দল, জোট ও মিত্রদের আসন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে আওয়ামী লীগ। একই সময় বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়েও সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। শেষ পর্যন্ত কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে ১৪ দলের শরিকেরাও প্রতিক্রিয়া জানাবে—এমন আভাস পাওয়া গিয়েছিল। সেটাও আর হয়নি।

এদিকে গতকাল দুপুরে জাতীয় পার্টি (জাপা) ২০০ আসনে সম্ভাব্য দলের প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি দেওয়া শুরু করে। সন্ধ্যার পর দলটি ৪৭টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঠিক করে তা গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, তারা এইচ এম এরশাদের জাপাকে ৪০ আসনের বেশি দিতে চাচ্ছে না। চল্লিশের বেশি আসনের বিষয়ে জাপা অনড় থাকলে অতিরিক্ত আসনগুলো উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও অন্য মিত্রদের প্রার্থী থাকতে পারবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, দলটির পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২৫০টি মনোনয়নের চিঠি বিলি করা হয়েছে। কিছু আসনে দুজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ২৩১ আসনে দলের প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দলীয় চিঠি দেওয়া হয়েছে এমন আসনেও জোটের শরিকদের বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত এই সুযোগ থাকছে। জাতীয় পার্টিও বলছে, আসন চূড়ান্ত হলে অন্যদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হবে।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের জোট হচ্ছে ১৪ দল। বর্তমান সংসদে শরিকদের চারটি দলের ১৫ জন সাংসদ আছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত ওই চারটি শরিক দল ১২টি আসনের নিশ্চয়তা পেয়েছে। আসন কমার কারণে তারা ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেসব শরিকের বর্তমানে কোনো সাংসদ নেই, আগামী সংসদ নির্বাচনেও কোনো আসন পাচ্ছে না, তাদের মধ্যেও অসন্তোষ আছে।

গতকাল সংবাদ সম্মেলন ডেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ না করায় সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ জোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। কারিগরি ও কৌশলগত (টেকনিক্যাল এবং স্ট্র্যাটেজিক্যাল) কারণে জোটগত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দল, জাতীয় পার্টি ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও নিজ নিজ প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি দিচ্ছে। পরে সবার তালিকা যাচাই–বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, শরিকদের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে ৬৫ থেকে ৭০ আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ মাঠপর্যায়ে আরেকটি জরিপ করবে। কিছু আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কে আসলে জনগণের কাছে বেশি জনপ্রিয়, এটা বিবেচনায় নেওয়া হবে। আবার কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপির মধ্যেও থাকতে পারেন।

জাপার সঙ্গে দর–কষাকষি