পুলিশ বলল চোরকে দেখলে কল করতে!

ঘটনাটি ২২ নভেম্বরের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র তৌফিক আহমেদ তাঁর কক্ষে মুঠোফোন চার্জে দিয়ে বেরিয়েছিলেন দাঁত মাজতে। এসে দেখেন মুঠোফোনটি নেই। চার্জার বিছানায় পড়ে আছে। মুঠোফোনের খোঁজ করতে গিয়ে নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো তৌফিকের। সে কথাই তিনি জানিয়েছেন ফেসবুকে। কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্র তৌফিক শেরেবাংলা হলের ৪০১১ নম্বর কক্ষে থাকেন। তিনি জানালেন, ফোন চুরি হওয়ার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, একটি অচেনা ছেলে হলে ঢুকেছিল। মেহেদী হাসান নামের একজনের খোঁজ করছিল। অন্য হলগুলোতেও গিয়েছিল। ঢুকতে পারেনি।

চুরি হওয়া শাওমির রেডমি নোট ফোর মডেলের মুঠোফোনটি বছরখানেক আগে ১৯ হাজার টাকায় কিনেছিলেন তৌফিক।

বৃহস্পতিবার ক্লাস ছিল না। সেদিনের জন্য একগাদা কাজ জমিয়ে রেখেছিলেন তৌফিক। সব ফেলে রেখে মুঠোফোন উদ্ধারের কাজে নামলেন। একে ওকে ধরে হলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বের করলেন। এরপর সেই ফুটেজ নিয়ে ছুটলেন থানায়। প্রথমে গেলেন লালবাগ থানায়। সেখান থেকে জানানো হলো বুয়েট লালবাগে পড়েনি। তিনি যেন বংশাল বা চকবাজার থানায় যান। তৌফিক চকবাজার থানায় গেলেন।

>বুয়েটের ছাত্র তৌফিকের মুঠোফোন চুরি হয়। তিনি থানায় গেলে তাঁকে বলা হয়, চোরকে দেখলে তিনি যেন বিষয়টি পুলিশকে জানান।

তৌফিক বললেন, থানায় যাওয়ার পর প্রথম দেখা হলো এক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর ইউনিফর্ম ছিল না। তিনি তাঁর থানায় আসার কারণ শুনলেন। তিনি যত বলেন তাঁর মুঠোফোন চুরি গেছে, ওই ব্যক্তি ততই জোর দিয়ে বলতে থাকেন মুঠোফোন চুরি যায়নি। ওটা হারিয়েছে। তিনি একপর্যায়ে চোরের ছবিও দেখালেন। তখন ওই ব্যক্তি পাল্টা জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি (তৌফিক) চোরকে চেনেন কি না। চেনেন না শুনে ওই ব্যক্তি হাসতে হাসতে বললেন, ‘চেনেন না তো আমরা কী করব? স্যার আসুক। দেখেন কী বলেন।’ কিছুক্ষণ পর ডিউটি অফিসার এলেন। তিনি আবারও প্রথম থেকে সব ঘটনা খুলে বললেন। চোরের ছবিও দেখালেন।

তৌফিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিউটি অফিসার বললেন, “দেখেন ভাই, আপনারা বুয়েটে পড়েন, অনেক শিক্ষিত। এই কমদামা জিনিসের জন্য কষ্ট করে লাভ নেই। এটা খুঁজে পাব। কিন্তু সে জন্য আমাকে ১০–১৫ দিনের টিমওয়ার্ক করতে হবে। এত প্যারা নেওয়া যায় বলেন? কত কাজ!”’

তৌফিক বলেন, সাধারণ ডায়েরি করে ফেরার পথে ডিউটি অফিসার তাঁকে চোরের ছবি ফিরিয়ে দিলেন। অথচ তিনি ছবি দিয়েছেন চোর ধরতে সুবিধার জন্য। কেন ছবি ফিরিয়ে দিচ্ছেন? জানতে চাইলে ডিউটি অফিসার বলেন, ‘চোর খুঁজব না ভাই, লাগবে না। আমার ফোন নম্বর রাখেন। চোরকে দেখতে পেলে কল করবেন। গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাব।’

গতকাল সোমবার পর্যন্ত তৌফিক তাঁর মুঠোফোন খুঁজে পাননি। তবে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার তিন দিন পর গত রোববার চকবাজার থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ বিশ্বাস ফোন করছিলেন।

রোববার রাতে প্রদীপ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ফোনটা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।