কেশবপুর আ.লীগে একপক্ষে আনন্দ, অন্য পক্ষে হতাশা

যশোরের কেশবপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার পরে এক পক্ষে চলছে মিষ্টি বিতরণ, অন্য পক্ষে চলছে বিষাদ ও হতাশা। একই সঙ্গে চলছে জয়-পরাজয়ের হিসাব–নিকাশ।

একমাত্র কেশবপুর উপজেলা নিয়ে যশোর-৬ আসন। এই আসনে বর্তমান সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁর অনুসারীদের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। তাঁর পক্ষের কর্মীরা গত দুদিনে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ-উল্লাস করেছেন। রোববার কর্মী-সমর্থকেরা একত্র হয়ে দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছেন ও রং ছিটিয়েছেন। এ সময় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত জনসাধারণকেও মিষ্টিমুখ করানো হয়। কর্মীদের মধ্যে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় সেখানে।

গৌরিঘোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও দলের ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম হাবিবুর রহমান বলেন, মনোনয়ন ঘোষণার পরে কার্যালয়ে সভা করা হয়। সেখানে নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা করা হয়।

বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত, কর্মীরা উৎফুল্ল। দল সঠিক নেতার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইসমাত আরা সাদেককে বিপুল ভোটে জিতিয়ে আমরা সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে নৌকা তুলে দেব। এ বিষয়ে আমাদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

ইসমাত আরা সাদেকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা ও কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। ইসমাত আরা সাদেক মনোনয়ন পাওয়ার পরে হতাশা দেখা দিয়েছে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ নেই।

বঞ্চিত প্রার্থীদের বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। তাঁরা বলেন, এই পাঁচ বছর তাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন। হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। অপমানিত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন। এখন এই প্রার্থীকে কীভাবে ভোট দেবেন?

উপজেলার অড়ুয়া গ্রামের একজন নেতা বলেন, দল সঠিক লোককে মনোনয়ন দেয়নি। বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের আহ্বায়ক ও পরচক্রা গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম উপজেলা চেয়ারম্যান মনোনয়ন পাক। আমাদের মনে অনেক দুঃখ। আমরা সবাই নীরব হয়ে গেছি। ভোটকেন্দ্র যাব কি না, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তবে নির্বাচনের দিন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকগাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। যেহেতু শেখ হাসিনা আমাদের নেত্রী, সেহেতু তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যেতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসমাত আরা সাদেক গত ৫ বছর আমাদের ডাকেননি। এখন তিনি ডাকলেও ভোটে নামব, না ডাকলেও ভোটে নামব।’

ইসমাত আরা সাদেকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তপন কুমার ঘোষ বলেন, ইসমাত আরা সাদেক বিভাজনে বিশ্বাস করেন না। তিনি সবাইকে একসঙ্গে নিয়েই সংসদ নির্বাচন করবেন। কারণ, এই মুহূর্তে প্রধান কাজ নির্বাচনে জয় লাভ করা।