ইভিএম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কাজী ফিরোজ রশীদ, সুব্রত চৌধুরী, আবদুস সালাম, সাদেক খান, আবু আহমেদ মন্নাফী
কাজী ফিরোজ রশীদ, সুব্রত চৌধুরী, আবদুস সালাম, সাদেক খান, আবু আহমেদ মন্নাফী

ঢাকার দুটি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন এটি প্রযুক্তিবান্ধব। এই যন্ত্রে ভোট হবে ঝামেলাবিহীন। আবার অনেকে বলছেন, সূক্ষ্মভাবে ভোট চুরি করতেই এই ব্যবস্থা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢাকা নগরের দুটি আসনসহ দেশের মোট ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ঢাকার আসন দুটি হলো মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসন এবং ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও কোতোয়ালি এবং বংশালের একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-৬ আসন।

প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম যুক্ত হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে এ নিয়ে কমবেশি আলোচনা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন। মো. সেলিম নামের একজন বলেন, তিনি পড়ালেখা জানেন না। যন্ত্র ব্যবহার করে ভোট দেবেন কীভাবে?

ইভিএম নিয়ে এখনো কিছুই জানেন না এমন ভোটারও পাওয়া গেছে। কাটাসুর এলাকার একটি বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী আবদুল খালেক বলেন, ইভিএম সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। এ প্রতিবেদকের কাছেই প্রথম শুনলেন। তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে যাইয়া দেখমু, জিনিসটা কী।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি আসনে ভোট গ্রহণের জন্য প্রায় ১৫ হাজার ইভিএম তৈরি রাখা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে পাঁচটি করে ভোটকক্ষ থাকবে। প্রতি কক্ষে থাকবে একটি করে ইভিএম। প্রতি কেন্দ্রেই আরও একটি করে যন্ত্র অতিরিক্ত রাখা হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা-১৩ আসনের ভোটার আবিদুল ইসলাম বলেন, নতুন এই প্রক্রিয়াকে তিনি স্বাগত জানান। কিন্তু এটি নিয়ে সন্দেহও আছে। তাঁরা গণমাধ্যমে জেনেছেন, আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট ম্যানুয়ালি নেওয়ার ক্ষমতা পাবেন, যা ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।

আনোয়ার হোসেন নামে আরেক ভোটার বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে যেতেই হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিরক্ষর ভোটারদের জন্য এটি কতটা ব্যবহারবান্ধব হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। ইভিএম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন এ ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ব্যবস্থায় আমি আনন্দিত।’

তবে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালাম ইভিএম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই ইভিএমের ব্যাপারে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। এ পদ্ধতি সম্পর্কে ভোটাররা অবগত নন। এই যন্ত্র দিয়ে কারচুপির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।’

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে ঢাকা-৬ আসনের ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে। ভোটার ইলিয়াস আলী বলেন, ইভিএম নিয়ে নানা রকম বিতর্ক রয়েছে। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে না। এর ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে আলোচনার পর ইউটিউবে এর ব্যবহার–সংক্রান্ত একটি ভিডিও দেখেছেন। ভিডিও দেখে মনে হয়েছে এর ব্যবহার খুবই সহজ।

ঢাকা-৬ আসন থেকে এখনো পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ইভিএম সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘নিজেরই এ সম্পর্কে ধারণা নেই, মন্তব্য করব কীভাবে। এ আসনে পৌনে তিন লাখ ভোটার রয়েছেন। যাঁদের অনেকেরই প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা নেই। অল্প দিনে তাঁদের কীভাবে ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে জানি না।’

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘আমি অবশ্যই এ ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাই। একসময় আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারতাম না, এখন করছি। পরিবর্তনকে মেনে নিতে হবে।’

জানতে চাইলে এ আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া ইশরাক হোসেন বলেন, ‘ইভিএমের সুবিধা-অসুবিধা দুটিই আছে। আধুনিক যুগে প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে। ইভিএম যন্ত্র নিয়ে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু এর যেন অপব্যবহার না হয়, যন্ত্রে যাতে কারসাজি বা হ্যাক করা না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

ইশরাক হোসেন আরও বলেন, দলীয় পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পাশাপাশি এ আসনের পিছিয়ে পড়া লোকজন, যাঁরা প্রযুক্তির সঙ্গে অভ্যস্ত নন, তাঁদের ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে জানাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নপ্রত্যাশী গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল যখন ইভিএমের বিরোধিতা করছে, তখন নির্বাচন কমিশন অতি উৎসাহী হয়ে তা ব্যবহার করছে। নির্বাচন কমিশনের নানান প্রশ্নবিদ্ধ কাজের মধ্যে এটি একটি। ইভিএমে একজনকে দেওয়া ভোট অন্যজনের হিসাবে যোগ হওয়ার সুযোগ আছে। মেশিনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’