মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত দর-কষাকষি

>
  • আজ বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন
  • শরিকেরা সুবিধাজনক আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছে
  • ১০-১৫টি আসনে এখনো জটিলতা রয়ে গেছে
  • এ জন্য জোট–মিত্রদের সঙ্গে সমঝোতা চূড়ান্ত করা যায়নি

আসন সমঝোতা চূড়ান্ত না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক এবং জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য মিত্র দলগুলো যার যার সুবিধাজনক আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছে। কেউ নিজের দলের মনোনয়নে, কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত দর-কষাকষি করার লক্ষ্যেই এই কৌশল নিয়েছে শরিকেরা। জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগও এতে সায় দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও তাদের মিত্র দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো বলছে, ১০-১৫টি আসনে এখনো জটিলতা রয়ে গেছে। এ জন্য জোট ও মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে কে কয়েকটি আসন পেতে পারে, মৌখিকভাবে সবাইকে একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে। এতে জোটের অধিকাংশ শরিক ও মিত্ররা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এ জন্য দর-কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে। আজ বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

এদিকে আওয়ামী লীগ শুরুতে ২৫০টি মনোনয়ন-চিঠি বিতরণ করেছিল। বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর আরও কিছু আসনে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সান্ত্বনা দিয়ে ক্ষোভ থামানোই প্রধান লক্ষ্য।

প্রত্যাহারের শেষ দিন চিঠি দিয়ে যাঁদের পক্ষে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার চিঠি দেওয়া হবে, তাঁরাই হবেন দল, জোট ও মিত্র দলের মূল প্রার্থী। এর মাধ্যমে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াও কিছুটা ঠেকানো যাবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন।

নৌকা প্রতীক নিয়ে যাঁরা সংসদ নির্বাচন করবেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই মনোনয়নের চিঠি নেওয়ার সময় প্রত্যাহারের চিঠিতে সই রেখে দেওয়া হয়েছে। ফলে দলের প্রত্যাহারের চিঠিতে যে কারও মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে।

ফরিদপুর-২ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগের প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। এরপর এলাকায় তাঁর সমর্থকেরা বিক্ষোভও করেন। আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, সোমবার রাতে সাজেদা চৌধুরী গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর মনোনয়নের চিঠি সম্পর্কে জানতে চান। পরে তাঁকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়।

তবে সাজেদা চৌধুরীর আসনে আওয়ামী লীগের মিত্র জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সালও ভোট করছেন।

এদিকে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টিকে (জাপা) মৌখিকভাবে ৪২ থেকে ৪৫টি আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ আশ্বস্ত করেছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। তবে জাপা ৫৪টি আসন চাইছে। দলটি গত সোমবার ৪৭ জন প্রার্থীর নামের তালিকা প্রকাশ করে। একই দিন দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা প্রায় ২০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছেন। পরে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হলে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

১৪-দলীয় জোটের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদের দুই অংশ, জাতীয় পার্টি (জেপি) এবং তরীকত ফেডারেশনকে মৌখিকভাবে ১২ আসনে ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৫টি আসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে দলটি আরও দু-একটি আসন চায়। এ জন্য তারা ৩৪ আসনে প্রার্থী দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল সোমবার দলটির প্রার্থীরা ৩০টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।

গতকাল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, জোটগতভাবে তাঁদের দলের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। দু-একটা বাকি আছে, সেটাও আজ-কালের মধ্যে সমাধান হয়ে​ যাবে।

জেপি এখন পর্যন্ত দলের সভাপতি ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছে। তবে দলটি আরও দু-একটি আসন চাইছে। এ জন্য ২৫টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারে। বর্তমানে এই দলের দুজন সাংসদ আছেন।

জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সঙ্গে এখনো আওয়ামী লীগের আলোচনা চলছে।

গণতন্ত্রী পার্টির বর্তমান সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। আগামী নির্বাচনেও কাউকে প্রার্থী করার বিষয়ে আশ্বাস দেয়নি আওয়ামী লীগ। তারাও ১২-১৪টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেবে বলে জানা গেছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী শুক্রবার তাঁদের দলের বৈঠক আছে। সেখানে কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড সূত্র বলছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন নবগঠিত যুক্তফ্রন্টকে তিনটি আসনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে কথা চলছে। তবে যুক্তফ্রন্ট আরও ৩-৪টা আসন নিয়ে দর-কষাকষি করছে। তবে যুক্তফ্রন্টের বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ বিবেচনা আছে। তাই এই জোটের নেতারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ জাসদের (আম্বিয়া) বর্তমান সাংসদ দুজন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে বর্তমান সাংসদ মইন উদ্দিন খান বাদলের মনোনয়ন আগেই নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ। গতকাল দলের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়াকেও নড়াইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের চিঠি দেওয়া হয়। এই দলের নিবন্ধন নেই। তাই নৌকা প্রতীকে ভোট করবে। জাসদের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান পঞ্চগড়-১ আসনের বর্তমান সাংসদ। তিনি আওয়ামী লীগের চিঠি না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নাজমুল হক প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, তিনিসহ দলের আরও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি জোট প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত চূড়ান্ত তালিকা না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। তাই আওয়ামী লীগও একই কৌশল নিয়েছে। এই কৌশল দলের বঞ্চিত ও জোটের শরিকদের প্রতিক্রিয়া বুঝতেও সহায়ক হবে।