রনিকে নিয়ে বিএনপিতে প্রতিক্রিয়া

গোলাম মাওলা রনি
গোলাম মাওলা রনি

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা) আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনিও রয়েছেন। সাংসদ থাকার সময় বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচিত ছিলেন তিনি। তাঁকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় দলটির স্থানীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে।

পটুয়াখালী-৩ আসনে রনি ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন এবং গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান খান। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে তিনি দলটিতে যোগ দেন।

এ ব্যাপারে দশমিনা উপজেলা যুবদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রনি আওয়ামী লীগের সাংসদ থাকাকালে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছিল।’ তবে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আ. মোমিন তালুকদার বলেন, রনির যোগদানের বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়া হাসান মামুন বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ে অনেকে বাদ পড়েন। এ কারণে এই আসনে দলীয়ভাবে তিনজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে দল দলীয় প্রতীক বরাদ্দের আগে চূড়ান্তভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হবে। তবে আমার প্রত্যাশা, দলের নীতিনির্ধারকেরা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনোভাব বুঝতে পারবে।’

আর শাহজাহান খান বলেন, ‘দলীয়ভাবে যিনি মনোনয়ন পাবেন, আমরা তাঁকেই বিজয়ী করে আনব।’ একই কথা বলেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ সরোয়ার কালাম।

২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম মাওলা। এরপর গলাচিপায় দুটি নদী ভরাটকে কেন্দ্র করে তাঁকে জড়িয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম আলোর গলাচিপা প্রতিনিধি ও আমার দেশ পত্রিকার গলাচিপা প্রতিনিধির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ধর্ষণের অভিযোগে চারটি মামলা হয়।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ নদী দখলের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন পটুয়াখালী জেলা সদরে কর্মরত ছয় সাংবাদিক। রনির কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তিনি নিজে বাদী হয়ে ২০০৯ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালতে প্রথম আলো, সমকাল, যুগান্তরমানবজমিন–এর সম্পাদক, প্রকাশক ও স্থানীয় প্রতিনিধিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন।

২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী পটুয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদারের গলাচিপায় যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য পানপট্টিতে নির্মিত মঞ্চ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য সাংসদ রনি ও তাঁর দলবলকে দায়ী করেছিল। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার জেরে রনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। একপর্যায়ে কারাগারেও যেতে হয় তাঁকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে তাঁকে পরবর্তী পাঁচ বছর এলাকায় দেখা যায়নি।