অসন্তোষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন দুই নেতা

ইমদাদুল হক ও গোপাল চন্দ্র রায়
ইমদাদুল হক ও গোপাল চন্দ্র রায়

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে মহাজোটের শরিকদের ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই অসন্তোষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইমদাদুল হক ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র রায়।
গত রোববার জেলার তিনটি আসনের মধ্যে ঠাকুরগাঁও-১ ও ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ। সেখানে শরিক দুই দল জাতীয় পার্টি বা ওয়ার্কার্স পাটির মধ্যে একজনকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক কর্মী–সমর্থক রয়েছেন। এখানে সাংগঠনের ভিত্তিও বেশ মজবুত। ১৯৯১ সালে মোকলেসুর রহমান ও ১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি মো. ইমদাদুল হক দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের দখলে চলে যায় আসনটি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে ইমদাদুল হক দল থেকে মনোনয়ন পেলেও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কারণে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। ২০০৮ সালে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ সাংসদ নির্বাচিত হন। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির একজন করে প্রার্থী থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলী। এবারের নির্বাচনে এ আসন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান সাংসদ ইয়াসিন আলী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দীর্ঘদিন দলীয় সাংসদ না থাকার কারণে নেতা–কর্মীদের হতাশার সৃষ্টি হয়। এই কারণে এবারের নির্বাচনে মহাজোটের শরিকদের আসনটি ছাড় না দিতে এককাট্টা হন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
গত ২০ অক্টোবর রানীশংকৈল উপজেলা ‘নৌকার লক্ষ্যে নারীদের ঐক্য’ শিরোনামে এক নারী সমাবেশে ইমদাদুল হক এবারের নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী দেওয়া না হলে স্থানীয়ভাবে বিকল্প প্রার্থী দিয়ে ভোট করার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে দলের কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী না করার ক্ষোভে গত সোমবার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এর আগে ১৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেন গোপাল চন্দ্র রায়।
পীরগঞ্জ শহরের যুবলীগ কর্মী দুলাল সরকার বলেন, ‘পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলা নৌকার ঘাঁটি হওয়ার পরও আমরা দীর্ঘদিন নৌকায় ভোট দিতে পারছি না। আমাদের ভোটে কেউ এমপি হবেন আর আমরা বঞ্চিত থাকব, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাংসদ ইমদাদুল হক বলেন, এ আসনে জাতীয় পার্টির তেমন ভোট নেই। আর ওয়ার্কার্স পার্টির ভোট পাঁচ থেকে সাত হাজারের বেশি হবে না। আমি বারবার মনোনয়ন পাচ্ছি, আর তা প্রত্যাহার করে নিতে হচ্ছে। জোটের কারণে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ভোটে এ আসনটিতে লাঙ্গল আর হাতুড়ি মার্কার লোকেরা সাংসদ হয়ে আসছেন। তাঁরা আমাদের ভোটে সাংসদ হয়ে আমাদের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। আসনটিতে এবারও তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তৃণমূলের সমর্থকেরা বিদ্রোহ করে বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দিতেও পারেন। এ আশঙ্কা থেকে আমি দল থেকে কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশীকে মনোনয়ন দিতে দাবি করেছিলাম।কিন্তু সেটা বিবেচনা না করায় দলের কর্মী-সমর্থকদের অসন্তোষের কথা ভেবে প্রার্থী হয়েছি।
এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করলেও সাংসদের অনাগ্রহের কারণে এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এতে এলাকার মানুষ তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বঞ্চনার জবাব দিতেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তবে এ আসনে দলের কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন।