চার আসনে নতুন মুখ তিনটিতে দুজন করে

সিলেটের ছয়টি নির্বাচনী আসনে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ভোটের রাজনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনসহ তিনটিতে দুজন করে প্রার্থী। বিএনপি বলছে, দুজন করে প্রার্থীর বিষয়টি কৌশল। তবে এতে নেতা-কর্মীরা দোটানার মধ্যে পড়েছেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় চূড়ান্ত প্রার্থীদের পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে এমন কৌশল হিতে বিপরীত হতে পারে বলেও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ।

সিলেটের ছয় আসনে বিএনপির মোট ২২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে দল দুজন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এর বাইরে যে তিনটি আসনে একজন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে একটিতে রয়েছেন ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। বাকি দুটি আসনে একজন করে প্রার্থীর নামে মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার কারণ হচ্ছে, নবম জাতীয় সংসদে ওই দুই আসন জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। এবারও এ দুটি আসনে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আসন দুটি জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলেই এখানে বিএনপি একজন করে প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে।

সিলেট মহানগর ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। শেষ পর্যন্ত একজন সরে দাঁড়াবেন, এমনটাই জানিয়েছে বিএনপিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন চারজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, সিলেটে বিএনপির ঐকতান ধরে রাখতে ইনাম আহমদ চৌধুরীই এখানে শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। কারণ, তাঁকে ছাড়া এ আসনে জেতা অনেকটা কঠিন।

খন্দকার আবদুল মুক্তাদির গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মনোনয়নের চিঠি নিয়ে সিলেট ফিরেছেন। দুজনের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেকোনো একজন সরে দাঁড়াব।’

বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে সিলেট-২ আসনে নেতা-কর্মীদের দাবি ছিল, বিএনপির নিখোঁজ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়। কেন্দ্রও লুনাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাহসিনা এবারই প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম। সালাম নতুন মুখ। শফি আহমদ চৌধুরী অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করেছিলেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় আসনেই দুজন করে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। কারণ ঋণখেলাপি কিংবা অন্য কোনো সমস্যায় যদি তালিকায় থাকা প্রথম প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়, তাহলে দ্বিতীয় নম্বরে থাকা প্রার্থীকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। তবে আমার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নাই। আমি নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে সিলেট-৪ আসন। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সামসুজ্জামান। দিলদার হোসেন এর আগে দুবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। একবার বিজয়ী হয়েছিলেন। সামসুজ্জামান সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেলেন।

সিলেট-৫ আসনটি কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ। তিনি নতুন মুখ। এ আসনটি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। এবারও জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে নেতা-কর্মীরা ধারণা করছেন।

বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা মিলে গঠিত সিলেট-৬ আসনটি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। এবার এ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে। তিনি নতুন মুখ। অধিকাংশ আসনে দুজন প্রার্থী দিলেও এখানে একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে মূলত জামায়াতের প্রার্থীকে গণনায় রেখেই।

ফয়সল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বারবার পরাজয় হওয়ায় ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী চান এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে জনপ্রতিনিধিরা এই চাওয়ায় সোচ্চার। আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার মধ্য দিয়ে সেই চাওয়াটি পূর্ণ হলো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখব।’