মনোনয়ন নিয়ে কোন্দলের আশঙ্কা

সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন গতকাল হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর মাজার জিয়ারতে এলে নৌকা প্রতীক হাতে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।  ছবি: প্রথম আলো
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন গতকাল হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর মাজার জিয়ারতে এলে নৌকা প্রতীক হাতে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের ছয়টি নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ৩৮ জন। প্রায় দুই বছর ধরে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা ছিল তাঁদের। একটি আসন ছাড়া বাকিগুলোতে পুরোনোরাই মনোনয়ন পাওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগ অখুশি। এ অবস্থা থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক কোন্দল দানা বাঁধে কি না, এ আশঙ্কা ভর করছে দলে। এ অবস্থায় আজ বুধবার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ এক সভা আহ্বান করেছে।

আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতা গতকাল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সিলেটের ছয়টি আসনের প্রত্যেকটিতে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁদের ঘিরে তৃণমূল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় গত রোববার দলের মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোমালিন্য ওই মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা দূর করতে না পারলে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে নেতিবাচক ফলাফল আসতে পারে।

দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দুজন নেতা জানালেন, প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিল। এসব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ঘিরে দলে মনস্তাত্ত্বিক বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য না হলেও ভোটের আগে মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিরা সেটি থামাতে না পারলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোলাপগঞ্জের এক কর্মী বলেন, একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর কারণে বিপাকে পড়েছে দল। যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন, তিনি যদি অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে নির্বাচনের আগে সুসম্পর্ক তৈরি করতে না পারেন, তাহলে কোথাও কোথাও পরাজয়ের শঙ্কা থেকে যাবে।

সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচজন মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছিলেন। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই এ কে আবদুল মোমেন। এখন তাঁকে অপর প্রার্থীদের মনোমালিন্য দূর করতেই প্রথম উদ্যোগী হতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার মোমেন ঢাকা থেকে সিলেটে আসেন। তাঁকে বরণ করেছেন সিলেট আওয়ামী লীগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতবলয়ের নেতা-কর্মীরা। অবশ্য এ সময় এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান উপস্থিত ছিলেন। আজ বুধবার মহানগর আওয়ামী লীগ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় মোমেনের বাসভবন হাফিজ কমপ্লেক্সে কর্মিসভা আহ্বান করেছে। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ। তিনিও ঢাকা থেকে গত সোমবার সিলেট ফিরেছেন।

মনোয়নবঞ্চনার বিষয়টি আড়াল করে মিসবাহ বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু দল চায়নি। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, তাই দলীয় সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়ে নৌকার জয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে আমার। সিলেট-১ আসন বা যেকোনো আসনে দলীয় প্রার্থীরা আমাকে ডাকলে আমি তাঁদের সঙ্গে যেতে কোনো দ্বিধা থাকবে না।’

মনোনয়নবঞ্চিতদের নিয়ে মোমেনের পরিকল্পনা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শিগগিরই অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের জন্য তাঁদের সহযোগিতা চাইব। দলে কোনো কোন্দল নেই।’

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চারজন। এ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। নেতা-কর্মীদের ধারণা, এবারও মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে এখানে নৌকার প্রার্থিতা চেয়ে এরই মধ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন সাতজন। এর মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ মাহমুদ–উস–সামাদ চৌধুরী কয়েস। অবশ্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দুজন এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মাহমুদ–উস–সামাদ চৌধুরীকে অভিনন্দিত করেছেন। তবে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।

সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) আসনে মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করেছিলেন পাঁচজন। মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ ইমরান আহমদ। এ আসনের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত ইমরান আহমদ আমাদের ফোন করে সৌজন্যতাটুকু দেখাননি। যদিও দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষেই থাকব।’

সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন ছয়জন। মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার। সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ছিলেন ১১ জন। বিভক্তিও রয়েছে দলে। এ আসনের সাংসদ ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সপ্তাহ আগে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শনিবার তিনি গোলাপগঞ্জে বড় পরিসরে কর্মিসভা করেন।

শিক্ষামন্ত্রী আবার মনোনয়ন পাওয়ার পর এ আসন থেকে দলটির অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘নৌকা ও দলের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ আনুগত্য রয়েছে। দল যোগ্য বলে বিবেচনা করে মনোনয়ন দিয়েছে, আমরা তা মেনে নিয়েছি। এখন দলকে বিজয়ী করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই আমাদের।’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। স্বাভাবিকভাবেই এখানে প্রচুর মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু এটি বিষয় নয়। কারণ, সংসদ নির্বাচন তো শেষ পর্যন্ত একজনকেই করতে হবে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাঁকেই যোগ্য মনে করেছেন, তাঁকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা তাঁর পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’