আইনি ও জোট জটিলতায় ১৪ আসনে বিকল্প

>
  • জোটের সমীকরণ এখনো মেলেনি
  • নতুন করে যুক্ত হয়েছে সম্ভাব্য আইনি জটিলতা
  • জটিলতা এড়াতে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়ন
  • শেষ সময়ে নতুন চারজনকে মনোনয়ন

আইনি জটিলতা ও জোটের সমীকরণ মাথায় রেখে ১৪টি আসনে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত দুই দিনে চারটি আসনে নতুন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় দলটি। ফলে এসব আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা স্পষ্ট হয়নি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-২ আসন থেকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও নূরুল আমিন ওরফে রুহুল গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মায়া শুরুতেই দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু নূরুল আমিন গত মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র পান। আইনি জটিলতায় মায়ার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই নতুন করে নূরুল আমিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

চাঁদপুর-৪ আসন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও বরিশাল-২ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহ আলমও মঙ্গলবার দলের মনোনয়ন পান। তাঁরা দুজনই বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেন। অবশ্য চাঁদপুর-৪ আসনে প্রথমে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয় বর্তমান সাংসদ মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াকে। তিনি মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। আর বরিশাল-২ আসনে আগে মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান সাংসদ তালুকদার মো. ইউনুস মনোনয়নপত্র জমা দেননি। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

আইনি জটিলতায় বাদ পড়তে পারেন
চাঁদপুর-২ আসনে কে দলের মূল প্রার্থী, এ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও নূরুল আমিন দুজনই গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ২০০৮ সালে মায়াকে ১৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়। ২০১০ সালে হাইকোর্ট সাজা বাতিল করে খালাস দেন। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল বিভাগে আবেদন করলে ২০১৫ সালে হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে পুনঃশুনানির আদেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টে শুনানি করে গত অক্টোবরে খালাস পান মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী।

ঢাকা-৭ আসনে সাংসদ হাজি মোহাম্মদ সেলিমেরও আইনি জটিলতা রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন। এ জন্য এই আসনে হাজি সেলিমের পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতকেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দুজনই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজি সেলিমেরও ২০০৮ সালে ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। হাইকোর্টে আপিলের পর ২০১১ সালে সাজা বাতিল হয়ে যায়। দুদক রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন। একই সঙ্গে পুনঃশুনানির আদেশ দেওয়া হয়। এখনো শুনানি চলছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদার ঢাকা-১৭ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার আলোচনা আছে। তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও জমা দিয়েছেন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা মাথায় রেখে তাঁকেও মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগ আকবর হোসেন পাঠান ওরফে নায়ক ফারুক ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খানকেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দুজন মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। জাপার চেয়ারম্যান এরশাদও এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই আসনে শেষ পর্যন্ত মহাজোটের প্রার্থী হবেন এরশাদই।

জোটের জটিলতাও আছে
ফরিদপুর-২ আসনে শুরুতে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মিত্র দল জাকের পার্টি এই আসনটি চাইছে। গতকাল জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সালও এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত কে আওয়ামী লীগের সমর্থন পান, তা নিশ্চিত হতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।

এর মধ্যে বরিশাল-২ আসনে প্রথমে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয় বর্তমান সাংসদ তালুকদার মো. ইউনুসকে। মঙ্গলবার নতুন করে চিঠি নিয়ে যান ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ আলম। গতকাল শাহ আলম মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ইউনুস বিরত থাকেন। শাহ আলমের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ইউনুস উপস্থিতও ছিলেন। ফলে এই আসনে এখন শাহ আলমই আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।

তবে এই আসন এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টিও (জাপা) চাইছে। সম্প্রতি দলটি ৪৭ প্রার্থীর নামের একটা তালিকা গণমাধ্যমে পাঠিয়ে তাঁদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করে। এই তালিকায় বরিশাল-২ আসনে চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজের (সোহেল রানা) নাম রয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই আসন জাপাকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপা এখনো আসন সমঝোতার জন্য দর-কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে। জাপা ইতিমধ্যে ২০০ আসনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

জানতে চাইলে মাসুদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবেই। এখন আওয়ামী লীগের কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে থাকলে সেটা তাঁর ব্যাপার। তবে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।