চূড়ান্ত মনোনয়নের দৌড়ে কোন্দল বাড়ার শঙ্কা

কুষ্টিয়ার চারটি আসনেই বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন–দৌড়ে কোন্দল বাড়ার শঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাঁরা মনে করছেন, এখনই এককভাবে মনোনয়ন দিলে বিজয় তুলে আনা সহজ হতো। শেষ সময়ে যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর সঙ্গে নেতা–কর্মীরা না–ও থাকতে পারেন। আর বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আবার বেড়ে যাবে।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে নেতা-কর্মীদের আগলে রেখেছেন সাবেক সাংসদ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। এই আসনে দলের বিরোধ ততটা জোরালো না হলেও ভেতরে-ভেতরে মতবিরোধ আছে। রেজা আহমেদ মনোনয়ন–দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত রমজান আলী তাঁর পথের কাঁটা হতে পারেন। যৌথভাবে দল দুজনকেই প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে।

রেজা আহমেদ বলেন, ‘শত অত্যাচার–নির্যাতন সহ্য করে মাঠে টিকে আছি। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা দেওয়া হচ্ছে, তার সব আমাকে দেখতে হয়। দলই বিবেচনা করবে কে যোগ্য। তবে এটা যত দ্রুত করবে, ততই মঙ্গল।’

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিরোধ এখন তুঙ্গে। তিনবারের সাবেক সাংসদ শহিদুল ইসলাম হঠাৎই দলের মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েছেন। অবশ্য তাঁকে মাইনাস করতে একটি পক্ষ কঠোর অবস্থানে। ২০০১ সালের দিকে সাংসদ শহিদুলের ব্যাপক দাপট ছিল। সে সময় প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ এনে তাঁকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে দলের বড় একটি অংশ। এ অবস্থায় এই আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেত্রী ফরিদা ইয়াসমীন প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন।

রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, ‘দল আমাকে যোগ্য মনে করেছে বিধায় মনোনয়ন দিয়েছে। ভোটের মাঠে আমার জনপ্রিয়তা আছে বলেই অনেকে ভয় পায়। মনোনয়ন পেলে আমার বাবার এ আসনটি ফের পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হব।’

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনেও মনোনয়ন নিয়ে ধোঁয়াশা। সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে একটি পক্ষ। আর রাজনীতির মাঠে না থাকা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের পক্ষ নিয়েছে একটি অংশ। একাংশ নেতা-কর্মীর অভিযোগ, সোহরাব উদ্দিন ৫ বছর ধরে মাঠে–ময়দানে থেকে কাজ করছেন। মামলা ও হামলার পরও তিনি মাঠ ছাড়েননি। জেল খেটেছেন।

তারপরও তাঁকে মনোনয়নবঞ্চিত করলে জয় পাওয়া অসম্ভবই হবে।

তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, মনোনয়ন পাওয়া জাকির হোসেন সরকার শিল্পপতি। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতিতে টিকে আছেন।

জেলা, উপজেলা ও শহর বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একটি পক্ষ সোহরাবের সঙ্গে থাকলেও অন্য একটি পক্ষ জাকিরকে সমর্থন দিচ্ছে। একাংশের দাবি, জাকিরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উল আলম হানিফ ফুরফুরে মেজাজে থাকবেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী সোহরাব উদ্দিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে বিএনপি কিছুটা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবে।

এ বিষয়ে সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘মামলা সহ্য করে, মাটি কামড়ে পড়ে আছি। চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলে অবশ্যই ধানের শীষকে বিজয়ী করে তবে মাঠ ছাড়ব।’

জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছি। দল মনোনয়ন দিলে বিএনপির সবাই আমার পক্ষে মাঠে নামবে।’

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনেও ধানের শীষ নিয়ে চলছে টানাটানি। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী এককভাবে প্রাথমিক মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত পারেননি। কুমারখালী বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র নূরুল ইসলাম আনসার প্রামাণিকও টিকিট পেয়েছেন। দুই উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটির বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর সঙ্গে মেহেদী রুমীর বিরোধ রয়েছে। মেহেদী আহমেদ রুমীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হলে বিএনপি আসনটি হারাতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরা। কারণ, নিজ দলের পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গেও মেহেদীর সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়েছে।

নূরুল ইসলাম বলেন, ‘মেহেদী রুমীর জনপ্রিয়তা শূন্য। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি জনবিচ্ছিন্ন। দল যদি আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয় তাহলে ধানের শীষ জয়ী হবে।’

মেহেদী আহমেদ রুমী বলেন, ‘তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি, দলকে সংগঠিত করেছি। যেকোনো সময়ের চেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ। আমি মনোনয়ন পেলে সবাই মাঠে নামবে।’