আ.লীগে চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, জামাই-শ্বশুরের দ্বন্দ্ব চলছেই

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির দুবারের সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতিসহ আওয়ামী লীগের চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াও এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রেজাউল ইসলাম সাংসদ জিয়াউল হকের জামাতা।

এই আসনে সাংসদ জিয়াউল হক মৃধার সঙ্গে তাঁর জামাতা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। আসনটি জোটের জন্য রেখে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।

জাপা থেকে রেজাউল ইসলামের মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁর শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধার পক্ষের লোকজন গত মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। জিয়াউল হকের কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল কুট্টাপাড়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে ‘সরাইল আসনে বহিরাগত মানি না’ বলে স্লোগানও দেন। বর্তমানে কেউ আসনটি ছাড় দিতে নারাজ।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে জোট থেকে মনোনয়ন পান রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। পরে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে ওই আসনে সাংসদ হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। ওই আসনে উবায়দুল মোকতাদিরকে এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত করা হয়েছে। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে জোট থেকে জাপার প্রার্থী ছিলেন রেজাউল ইসলাম। কিন্তু জাপা থেকে রেজাউলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনীত করা হয়েছে। আর এ আসনের বর্তমান সাংসদ তাঁর শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জোটের হিসাব-নিকাশ মেলাতে শরিক দলগুলোকে আসনটি বারবার ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৭৩ সালের পর এ আসনে কখনোই জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। এ অবস্থার জন্য কোন্দল আর প্রার্থীজটকেই দায়ী করা হয়। আওয়ামী লীগ থেকে এবারও মনোনয়ন চান অন্তত ১৯ জন নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মঈনউদ্দিন মঈন ও জাপার সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সফি উল্লাহ মিয়া, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক  কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা সরাইল উপজেলা ও অন্যরা আশুগঞ্জ উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিন, চারচারতলা ইউপির চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন খন্দকার, আড়াইসিধা ইউপির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু রেজভি আহমেদ, জেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন স্বপনসহ উপজেলার অন্য নেতা-কর্মীরা মঈনউদ্দিনের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সদর ইউপির চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেখতে চেয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে হতাশ হয়েছে এলাকাবাসী। আগামী ৮ ডিসেম্বরের পর আমরা কথা বলব। তবে আশা করছি, আমরা নৌকা প্রতীক পাব।’

মঈনউদ্দিন মঈন বলেন, ‘এলাকার প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছে। পরে কি হবে না–হবে তাঁরা দেখবে বলে আমাকে জানিয়েছে।’

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘রাজনীতিতে সম্পর্কের বিষয়টি পরে আসে। তবে আমার বাবা নেই। জাপার সাংসদকে আমি বাবা ডাকি। তিনি আমার শ্রদ্ধার মানুষ। শেষ পর্যন্ত সাংসদ আমার পক্ষে কাজ করবেন।’ নিজের আসন ছেড়ে শ্বশুরের আসন থেকে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা জাতীয় নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়। আর জোটের স্বার্থে দল আমাকে সেখান থেকে মনোনয়ন দিয়েছে।’

জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি আমার। আমি এ আসনে পরপর দুবারের সফল এমপি। আসনটি আমার মেয়ের জামাই রাজনৈতিকভাবে ছিনতাই করেছে।’