প্রথম আলোসহ অন্যান্য ওয়েবসাইট নকল করতেন তাঁরা

প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার ওয়েবসাইটের আদলে নকল ওয়েবসাইট তৈরির দায়ে কামাল হোসেন ওরফে জি এম কামাল ও মো. আল আমিনকে আটক করে র‍্যাব-২। ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে
প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার ওয়েবসাইটের আদলে নকল ওয়েবসাইট তৈরির দায়ে কামাল হোসেন ওরফে জি এম কামাল ও মো. আল আমিনকে আটক করে র‍্যাব-২। ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার ওয়েবসাইটের আদলে নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচারের অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ওই দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

আটক করা ওই দুই ব্যক্তি হলেন মো. কামাল হোসেন ওরফে জি এম কামাল (২৩) ও মো. আল আমিন (৩০)।

আটক করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন সেট জব্দ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র‍্যাব-২–এর পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন ফারুকী।

মো. মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ভুয়া খবরের আগ্রাসনের সঙ্গে সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে নামী সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটের পুরো নকল ওয়েবসাইট তৈরির মতো ঘটনা। এসব ভুয়া ওয়েবসাইটের পুরো নকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠকদের বিভ্রান্ত করে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো, আমার দেশ, নয়াদিগন্তের মতো প্রতিষ্ঠানের এ রকম ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে।

এই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রথম আলোর ওয়েবসাইটের আদলে বেশ কয়েকটি নকল সাইট, যেমন: www.prothomalo247.com, www.prothomaalo.com, www.daily-prothomalo.com, www.prothomalo.news তৈরি করা হয়েছে। নকল ওয়েব সাইটগুলোর ডোমেইনে নামের বানান প্রথম আলো নামের মূল বানানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগে বা পরে খুব কাছাকাছি রেখে প্রথম আলোর লোগো ব্যবহার করে সেখানে ভুয়া তথ্য দিয়ে বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে তা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিবিসি বাংলা, প্রথম আলোসহ দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের পেজ তৈরি করে ভুয়া খবর প্রকাশ করছে মহলটি।

মো. মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, প্রথম আলোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব ওই বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। র‍্যাব অনুসন্ধানে জানতে পারে, কিছু কুচক্রী মহল বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে সরকারবিরোধী প্রচার–প্রচারণা, বিভিন্ন জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিষোদ্‌গারের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত সাইবার ক্রাইম। এ বিষয়ে অভিযান শুরুর পর র‍্যাব-২ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নকল সাইট তৈরি করার অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে মো. কামাল হোসেন ওরফে জি এম কামাল ও মো. আল আমিনকে আটক করে। তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় কী, তা জানতে চাইলে মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, তাঁরা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত—এ প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মো. মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, আটক আল আমিন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি শেষ করেছেন। অন্যদিকে, কামাল হোসেন কুমিল্লার লাকসামের নওয়াব ফয়েজুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিবিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তাঁরা অনলাইনে আউটসোর্সিং, ডোমেইন-হোস্টিং সেল, ওয়েব ডিজাইন ও ডোমেইন রিসেলার, গুগল অ্যাডসেন্স, সোশ্যাল মার্কেটিং এবং বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকেন।

পুলিশ সুপার জানান, কেন বা কী কারণে তাঁরা প্রথম আলোর অবিকল ওয়েব ডোমেইন হোস্টিং করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে দুজন জানান, তাঁরা সরকারবিরোধী অপপ্রচার ছড়ানোর কাজে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার কপি হুবহু ওয়েব হোস্টিং করে থাকেন। নকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হলে বিএনপি ও জামায়াত বা সরকারবিরোধী সমর্থকেরা বেশি লাইক ও শেয়ার দেবে এবং তাতে করে ফেসবুক থেকে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব। সাধারণত, কোনো পোস্ট এক হাজারের অধিক ভিউ, লাইক বা শেয়ার হলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে প্রদান করে, যা পরবর্তী সময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডোমেইনের স্বত্বাধিকারী হিসেবে তাঁরা পেয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।