মহাজোটে জট, দ্বন্দ্বে নেতা-কর্মী

আবুল হোসেন  ও  মনসুর রহমান
আবুল হোসেন ও মনসুর রহমান

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক চিকিৎসক মনসুর রহমান। অন্যদিকে তাদের শরিক দল জাতীয় পার্টিও এ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তাদের প্রার্থীর নাম অধ্যাপক আবুল হোসেন। দুই প্রার্থীই গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনের প্রতীক কী হবে, তা নিয়ে দুই দলের নেতা–কর্মীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। দলীয় প্রতীক দিয়ে কেউ ভোট চাইতেও পারছেন না।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনসুর রহমান বলছেন, শেখ হাসিনা তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ আসনে তাঁকেই প্রথম মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে নেত্রীই নেবেন।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবুল হোসেনেরও দাবি, তিনিই মহাজোটের প্রার্থী। এটা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।

প্রার্থী নিয়ে এই জটিলতার মীমাংসা না হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনসুর রহমান অথবা জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন—এই দুজনের একজনকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। এতে করে আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে শেষ মুহূর্তের টানাপোড়েনে জোটের মধ্যে রীতিমতো উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরই জয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আবুল হোসেন। তিনি পুঠিয়ার বানেশ্বর ইউনিয়নের ভুবননগর গ্রামের মরহুম জেহের উদ্দীন প্রামাণিকের ছেলে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকার সময় পুঠিয়া–দুর্গাপুরের সাংসদ ছিলেন তিনি।

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনসুর রহমান রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কিসমত গণকৈড় ইউনিয়নের আড়ইল গ্রামের মরহুম আবদুর রহমান মণ্ডলের ছেলে। রাজনীতিতে তিনি পুরোনো মানুষ হলেও ভোটের মাঠে তিনি নতুন মুখ।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাকে জাতীয় পার্টি থেকে রাজশাহী-৫ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দল থেকে বলা হয়েছে, মহাজোটের সঙ্গে সারা দেশে আমাদের ২০০ প্রার্থীর মধ্যে জোটগতভাবে ৪৫টি আসন ছাড় দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ৪৫ আসনের একটিতে আমি প্রার্থী।’ তিনি বলেন, আসনগুলো ছাড় দেওয়ার ব্যাপারেও বিভিন্ন দিক বিবেচনা করা হবে। যেমন কোন আসনে কোন দলের প্রার্থীকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলে প্রার্থী বিজয়ী হবে, কোন আসনের প্রার্থীর অবস্থা কেমন—এসব বিচার-বিশ্লেষণ করে আসনগুলোতে মহাজোটের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সরকারে থাকার সময় আমি এ আসনের সাংসদ ছিলাম। তখন আমি এ আসনের প্রতিটি এলাকার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছি। পুঠিয়া-দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষ আমাকে চেনে। এমনকি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ব্যাপারে আমার ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। তাই আমি শতভাগ আশাবাদী যে আমাকেই শেষ পর্যন্ত রাজশাহী-৫ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’

আবুল হোসেন গত মঙ্গলবার পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র তুলে গতকাল বুধবার জমা দিয়েছেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জি এম হীরা বাচ্চু বলেন, তাঁরা দলের মনোনীত প্রার্থী মনসুর রহমানের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চাইছেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন হয়তো এটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। আবার এমনও হতে পারে, দুই প্রার্থীই থাকবেন। তাঁরা আলাদা আলাদাভাবে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।