আচরণবিধি মানলেন না কেউ

রাজশাহী চারঘাট-বাঘা আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়র আলম শোভাযাত্রা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। বাঘা উপজেলার সামনে।  ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহী চারঘাট-বাঘা আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়র আলম শোভাযাত্রা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। বাঘা উপজেলার সামনে। ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনী আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে শোভাযাত্রা নিয়ে রাজশাহীতে গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কোনো কোনো এলাকায় এই শোভাযাত্রার কারণে সড়কে তৈরি হয় যানজট।

এদিকে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিলের পরপরই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের মধ্যে উপহার, ত্রাণ, খাবার বিতরণ ও গাড়িবহর নিয়ে শোভাযাত্রা করেছেন। প্রকাশ্যে এসব হলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করেছে।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ্‌রিয়ার আলম বাঘা ও চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর সমর্থনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতা–কর্মীরা মোটরসাইকেল ও ভ্যানে চড়ে উপজেলা সদরে আসেন। প্রার্থী হজরত শাহদৌলার মাজার জিয়ারত করে সেখান থেকে শোভাযাত্রা করে উপজেলা চত্বরে আসেন। এখানে বিএনপির প্রার্থী নূরুজ্জামান খান, বজলুর রহমান ও আবু সাঈদ চাঁদের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের বহরে বেশি লোকজন ছিল না।

পুঠিয়া উপজেলা সদরে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা–কর্মীরা পৃথকভাবে স্লোগান দিতে দিতে ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়ক পদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। দুপুরে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মনসুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে বিকেলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাদিম মোস্তফা নেতা–কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্লোগান সহকারে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একইভাবে দলীয় নেতা–কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আবুল হোসেন।

গোদাগাড়ী উপজেলায় বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। কয়েক শ নেতা–কর্মী নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু। একইভাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির অপর প্রার্থী সাহিদ হাসান। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সরকারদলীয় প্রার্থী আয়েন উদ্দিনও শোভাযাত্রা নিয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে উৎসবমুখর পরিবেশে। নেতা–কর্মীরা এসেছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী আমরা পাঁচজন গিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। বাকিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সীমানার ভেতরে ঢোকেননি। তাই আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি।’

এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের বলেন, তাঁর কার্যালয়ের সীমানার ভেতরে পাঁচজনের বেশি নেতা–কর্মী নিয়ে কোনো প্রার্থী প্রবেশ করেননি।

রাজশাহী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু শোভাযাত্রা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। গতকাল রাজশাহী কোট চত্বরে।  ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু শোভাযাত্রা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। গতকাল রাজশাহী কোট চত্বরে। ছবি: প্রথম আলো

মনোনয়ন দাখিলের পরই উপহার, ত্রাণ, খাবার বিতরণ ও গাড়িবহর নিয়ে শোভাযাত্রায় নেমেছিলেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থীরাও। দলীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবু হেনা বাগমারায় পৌঁছান। এর আগে তিনি রাজশাহী জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার দপ্তরে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দুপুরে তিনি এলাকায় পৌঁছালে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রায় ২ হাজার মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে তাঁকে উপজেলার মচমইল থেকে ভবানীগঞ্জে নিয়ে আসেন। পরে তিনি উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জের আলুহাটায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন। সভায় উপস্থিত শত শত নেতা-কর্মী–সমর্থকের মধ্যে খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়।

আবু হেনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যস্ত থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আবু হেনার সমর্থক ভবানীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, তাঁরা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন।

অপরদিকে গত মঙ্গলবার সহস্রাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে শোডাউন করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংসদ এনামুল হক। এ সময় তাঁর সঙ্গে কমপক্ষে ২০ জন নেতা-কর্মী ছিলেন। এরপর গতকাল তিনি আবারও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধারের পরিবারের সদস্যদের ডেকে ভোট চেয়ে শীতের উপহার দেন।

ভবানীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সাংসদ বিধি ভেঙে সোয়েটার বিতরণ করে ভোট চেয়েছেন। এভাবে তফসিল ঘোষণার পর অনুদান দিলে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।

এ ছাড়াও সকালে সাংসদ বিধি লঙ্ঘন করে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অনুদানের চেক বিতরণ করেন। এ–সংক্রান্ত ছবিও সাংসদ এনামুল হকের অনুসারীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

এ বিষয়ে সাংসদ এনামুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর অনুসারীরা দাবি করেন, সাংসদ প্রতিবছর শীতেই মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষকসহ সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে শীতের উপহার দিয়ে থাকেন।

সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা ও বাগমারার ইউএনও জাকিউল ইসলাম গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা অনুসারে এগুলো করা যাবে না। প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সতর্ক করা হবে বলে জানান জাকিউল ইসলাম।