পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ সকালে ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। ছবি: সংগৃহীত
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ সকালে ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। ছবি: সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেছেন, পাহাড়ে সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। পার্বত্যবাসীর মানবাধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। সেখানকার অসহায় মানুষ প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা এ কথা বলেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জেএসএসের মধ্যে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনকামী পাহাড়িদের সঙ্গে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। সেই যুদ্ধে সন্তু লারমা ছিলেন সশস্ত্র শান্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
সন্তু লারমা বলেন, সরকারি দল সেনা বাহিনী ও পুলিশের যোগসাজশে জেএসএসের সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করছে এবং গ্রেপ্তার ও আটক করে নির্যাতন চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম জাতি-গোষ্ঠীমুক্ত করতে চাচ্ছে।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সন্তু লারমা বলেন, সরকার দাবি করছে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়িত করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়িত হয়েছে ২৫টি। তবে এর মধ্যে ভূমি সমস্যার সমাধান, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ প্রভৃতি মৌলিক বিষয়ের একটিও বাস্তবায়িত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চুক্তির সঙ্গে সংগতি রক্ষার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য আইনগুলো সংশোধন করা হয়নি। আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সংবলিত বিশেষ শাসন ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি। পাহাড়ি-বাঙালি স্থায়ী অধিবাসীদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদ গঠিত হয়নি। তিন জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, মাধ্যমিক শিক্ষা, পর্যটন, উন্নয়ন প্রভৃতি জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়নি।

সন্তু লারমা বলেন, আঞ্চলিক পরিষদ আইন কার্যকর না করে পরিষদকে অথর্ব করে রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি দখল বন্ধ হয়নি। গত ২১ বছরে একটি ভূমি বিরোধেরও নিষ্পত্তি হয়নি। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিরোধপূর্ণ ধারাগুলো সংশোধন করা হলেও বিধিমালা প্রণয়ন না করে ওই আইনের বাস্তবায়ন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাহাড়িদের ওপর অন্তত ২০টি সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে ১১টি। এই পরিস্থিতিতে পার্বত্য জনগণ ক্ষুব্ধ। ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা গভীরভাবে চিন্তিত।

সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক মেজবাহ কামাল চুক্তি বাস্তবায়নের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, জেএসএস নেতা দীপায়ন খীসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।