জামায়াত না বিএনপি, ধোঁয়াশা

খুলনা জেলার ছয়টি আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপির হয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ জন। তাঁদের মধ্যে নয়জনকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে তিনটি আসনে দুজন করে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়নের প্রাথমিক চিঠি পাওয়া নয়জনের মধ্যে ছয়জনই নতুন মুখ। সবাই মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। কিন্তু চূড়ান্ত প্রার্থী কারা হচ্ছেন, তা জানতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

খুলনা-৫ ও ৬ আসন থেকে বিএনপির ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর দুই প্রার্থীর নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা হলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সাংসদ মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং জামায়াতের খুলনা মহানগর আমির আবুল কালাম আজাদ।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ২০-দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খুলনা-৫ আসনে তাঁকে এবং খুলনা-৬ আসনে খুলনা মহানগর জামায়াতের সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতীকের বিষয়টি এখনো ঠিক হয়নি। ৯ ডিসেম্বরের পর জোটের একক প্রার্থী থাকবেন।
তবে জেলা বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যত দূর জানি জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে এখনো তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। সুতরাং বিএনপির প্রার্থীরাই খুলনার আসনগুলো থেকে নির্বাচন করবেন বলে মনে করছি।’

বিএনপি থেকে খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খান। তিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। এই আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী না থাকায় এবং এজাজ জনপ্রিয় প্রার্থী হওয়ায় দল আবারও তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে প্রথমবারের মতো এই আসনটি বিএনপি পাবে বলে আশা করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তবে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তিনি হেরে যান।

খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনে বিএনপির ছয়জন নেতা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন। এই আসনে দলটির ব্যাপক অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে। এখান থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুল এবং মহানগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও খালিশপুর থানা সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠুকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত রকিবুল ইসলাম। নির্বাচনী এলাকায় সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে স্বতন্ত্র একটি অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। অন্যদিকে আরিফুর রহমানের নিজস্ব একটি ভোটব্যাংক আছে। এ ছাড়া তাঁর বাড়ি বৃহত্তর নোয়াখালী এলাকায়। আসনটিতে নোয়াখালীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার আছেন। এই দুই নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় বাদ পড়েছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম। তিনি বয়সের ভারে অনেকটা ন্যুব্জ, হারিয়েছেন কর্মী-সমর্থক।

খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল এবং কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজকে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে শরীফ শাহ কামাল বিএনপির প্রার্থী হয়ে হেরে যান। অন্যদিকে আজিজুল বারী হেলাল ঢাকা-১৮ থেকে নির্বাচন করে হেরে যান। তিনি প্রথমবারের মতো খুলনার কোনো আসন থেকে নির্বাচন করছেন। প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার পর দুই নেতার কর্মী-সমর্থকেরাই এলাকায় আনন্দ–উল্লাস করেছেন। তবে নির্বাচনী এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় শেষ পর্যন্ত হেলালকেই প্রার্থী করা হবে বলে মনে করছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বড় একটি অংশ।

খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুন রহমান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি গাজী আবদুল হক। যিনিই চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন, তাঁর জন্য এটাই হবে প্রথম নির্বাচন।

খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা। খুলনা-২ আসন থেকেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। গত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগরের সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি আগে থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এ কারণে একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই কোনো কোনো আসন থেকে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর প্রত্যাহারের শেষ সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনীত করা সম্ভব হবে। ওই সময়ের মধ্যে জামায়াতের দুই প্রার্থী নিয়েও আলোচনা চূড়ান্ত হবে।