সাতবার হেরে এবারও প্রার্থী তিনি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মারফত আলী। ছবি: সংগৃহীত
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মারফত আলী। ছবি: সংগৃহীত

নাম তাঁর মারফত আলী। এলাকায় সবাই ডাকেন ‘মারফত মাস্টার’ বলে। এই মারফত আলী ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাতটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে আছে সংসদীয়, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন। তবে কোনো নির্বাচনেই তিনি জয়ী হতে পারেননি। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন মারফত মাস্টার। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।

এতবার পরাজয়ের পরও কেন নির্বাচনে অংশ নেন মারফত আলী? এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমি এমপি হতে চাই না। চাই ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে। এ জন্য যত দিন বাঁচব, নির্বাচনে অংশ নিয়ে যাব।’ মারফত আলী আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার জন্য তিনি নির্বাচন করে যাচ্ছেন। সামাজিক একটা পরিবর্তন চান তিনি। অন্য কোনো কারণ নেই।

জাতীয় পরিচয়পত্রের হিসাবে মারফত আলীর বয়স এখন ৬৮ বছর। তাঁর আদি বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার নওদা আজমপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে থাকেন মিরপুর পৌরসভার খন্দকবাড়িয়ায়। ১৯৮০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট চারটি সংসদীয় নির্বাচন, একটি করে উপজেলা ও পৌরসভা এবং একটি ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন মারফত আলী। এ ছাড়া কয়েকটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তা প্রত্যাহার করেন তিনি।

তাঁকে কেন সবাই ‘মাস্টার’ বলে ডাকেন—এই প্রশ্নের জবাবে মারফত আলী জানালেন, ১৯৭৪ সালে দৌলতপুর উপজেলার ছাতারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক ছিলেন তিনি। জাসদ গণবাহিনী করার কারণে পরে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে সবাই তাঁকে ‘মারফত বিএসসি’ বলে ডাকেন এবং চেনেন।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করার লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন মারফত আলী। বিয়ে করেননি। চিরকুমার এই মুক্তিযোদ্ধা হেসে বলেন, ‘জাসদ গণবাহিনীতে যাওয়ার পর আন্দোলনে ছিলাম। আর বিয়ে করা হয়নি।’ গল্পে গল্পে মারফত আলী জানালেন, ১৯৬২ সালে তাঁর রাজনীতির শুরু। ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৯-৭০ সালে মিরপুর উপজেলা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এরপর গণ-আন্দোলন, আইয়ুব খানের উৎখাত ও গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন মারফত আলী। স্বাধীন বাংলাদেশে দুই বছর কারাগারেও ছিলেন তিনি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে মিরপুর উপজেলায় সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ১২৬ ভোটে পরাজিত হন মারফত আলী। এরপর ছয় বছর এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে জাসদের (শাজাহান সিরাজ) হয়ে অংশ নিয়ে ১৩ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ভোট। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে কয়েক শ ভোট পেয়েছিলেন। ’৯৬ সালে জাতীয় জনতা পার্টির (ওসমানী) হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পেয়েছিলেন ৫ হাজার ভোট।

২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন মারফত আলী। একইভাবে ২০০৮, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্য, আর্থিক সংকট ও নির্বাচনী পরিবেশ ভালো না থাকায় এ কাজ করেছিলেন। এ ছাড়া ২০১১ সালে মিরপুর পৌরসভার মেয়র পদে অংশ নিয়ে প্রায় ১০০ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়ে পেয়েছিলেন ১০০ ভোট।

বর্তমানে বেঙ্গল ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত মারফত আলী। তবে দল নিবন্ধন না পাওয়ায় পরে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের হয়ে হারিকেন প্রতীক পেতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মারফত আলী বলেন, ২০০৮ সাল থেকে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। জোর করে ভোট দিয়ে দেয়। এ জন্য আর ভোট পাওয়া যায় না।