তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। রক্তাক্ত একজনকে রিকশাভ্যানে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। রক্তাক্ত একজনকে রিকশাভ্যানে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

বিশ্ব ইজতেমায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আজ শনিবার ভোর থেকে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানের ১ নম্বর প্রবেশফটকে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে ৫০ থেকে ৬০ জন আহত হন। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আহত ব্যক্তিদের টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও উত্তরার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন রয়েছে। মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা টঙ্গীর বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকে তাঁদের পক্ষের মুসল্লিদের ইজতেমা ময়দান দখলের আহ্বান জানাচ্ছেন এবং তাঁদের অনেকে প্রতিপক্ষের কাছে আটক রয়েছেন বলে দাবি করছেন।

ভোরে বিশ্ব ইজতেমা পরিচালনাসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। মাওলানা জুবায়ের ও দিল্লির মাওলানা সাদের অনুসারী দুই পক্ষের হাজার হাজার মুসল্লি পৃথকভাবে টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দান ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে আশুলিয়ার দিকে সড়কে অবস্থান নেন। এতে আজ শনিবার টঙ্গী ও রাজধানীর বিমানবন্দরসংলগ্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।


প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কামারপাড়া থেকে একদল মুসল্লি লাঠিসোঁটা হাতে ইজতেমা ময়দানের ১ নম্বর প্রবেশদ্বারে প্রতিপক্ষের অনুসারীদের ওপর হামলা চালান। মুহূর্তের মধ্যে স্থানটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আধা ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন দুই পক্ষকে একে অপরের থেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছে পুলিশ।


গাজীপুরের দিকে যান চলাচল ধীরগতিতেই রয়েছে। তবে ঢাকাগামী যানবাহন আগের চেয়ে কিছুটা বেশি গতিতে চলাচল করছে।

আহত একজনকে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং
আহত একজনকে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

সংঘর্ষের পর সরেজমিনে দেখা যায়, মাওলানা সাদের অনুসারীরা ময়দানের ভেতর প্রবেশ করে তা দখলের চেষ্টা করছেন। তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটা। ইজতেমা ময়দান দখলের জন্য গতকাল থেকে মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে যেসব মুসল্লি মাওলানা জুবায়েরের পক্ষে এসেছিলেন, তাঁদের যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাওলানা জুবায়েরের একজন অনুসারী মো. শাওন দাবি করেন, মাওলানা সাদের অনুসারীরা লাঠিসোঁটার পাশাপাশি রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হঠাৎ হামলা চালান। লাঠির আঘাতে তাঁর হাত কেটে গেছে। তিনি জানান, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ভূঁইয়া কালেকশন নামে তাঁর দোকান রয়েছে। তিনি গতকাল এখানে এসে যোগ দেন।

এই দুই পক্ষের বিরোধিতার কারণে আসছে বছরের বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত ঘোষণা করে সরকার। ১৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুই পক্ষ ছাড়াও পুলিশের আইজি, ধর্মসচিবসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা হওয়ার কথা ছিল।

প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারের ওই ঘোষণার পর থেকে সময়ে–সময়ে দুই পক্ষ জায়গায় জায়গায় অবস্থান নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। সবশেষ আজ ভোর থেকে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

আহত একজনকে রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং
আহত একজনকে রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

টঙ্গী পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, ইজতেমার ময়দানের ভেতর ও প্রধান প্রবেশপথগুলো মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা দখল করে আছেন। অন্যদিকে, মাওলানা সাদের অনুসারীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে আশুলিয়ার দিকে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। কয়েক হাজার মুসল্লি সড়কে অবস্থান নেওয়ায় রাস্তা সরু হয়ে যান চলাচল করছে ধীরগতিতে। এতে সেখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

জাহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইজতেমার মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।

ঘটনার জের ধরে রাজধানীতে বিমানবন্দরসংলগ্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর চত্বরে ফুটওভার ব্রিজের কাছে এখনো একটি পক্ষ অবস্থান নিয়ে আছে। জানা গেছে, তাঁরা মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী। ঢাকা থেকে মাওলানা সাদের অনুসারীরা যেন টঙ্গীতে গিয়ে তাঁদের পক্ষের মুসল্লিদের সঙ্গে যোগ দিতে না পারেন, সে কারণে তাঁরা প্রতিটি যানবাহন থামিয়ে দেখেন। যাত্রীদের মধ্যে মুসল্লি কেউ থাকলে তাঁকে নামিয়ে দেন। ফলে সেখান থেকে টঙ্গীগামী যানবাহন একটি একটি করে চলাচল শুরু করে। বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া মুসল্লিদের অনেকে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা দেন।

উত্তরা জোনের ট্রাফিকের সহকারী কমিশনার জুলফিকার জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ফজরের নামাজের পর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।