৩ প্রার্থীর বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

জামালপুর-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সাংসদ রেজাউল করিম হীরার পক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মোটরসাইকেল মহড়া। গতকাল বিকেল সোয়া চারটায় জামালপুর পৌর শহরের জিগাতলা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
জামালপুর-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সাংসদ রেজাউল করিম হীরার পক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মোটরসাইকেল মহড়া। গতকাল বিকেল সোয়া চারটায় জামালপুর পৌর শহরের জিগাতলা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চিঠি পাওয়া দুই নেতার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই রকম অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদারীপুর-৩ (সদরের একাংশ ও কালকিনি) আসনে একই দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

জামালপুর-৫ আসনে যে দুই নেতার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন বর্তমান সাংসদ রেজাউল করিম হীরা ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোজাফফর হোসেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামালপুর শহরের প্রধান সড়কে তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছেন।

বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, মনোনয়নের চিঠি পাওয়ার পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের এই দুই প্রার্থীর সমর্থকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রায় রাতেই শহরে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনও মোজাফফর হোসেন মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে শহরে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার দিগপাইত থেকে মোজাফফর হোসেনের পক্ষে দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর পৌর শহরের দিকে রওনা হয়। বহরটি বিকেল চারটার দিকে শহরের গেইটপাড় এলাকায় প্রবেশ করে। পরে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নান্দিনার দিকে চলে যায়। অপরদিকে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে সাংসদ রেজাউল করিমের পক্ষে বারুয়ামারী থেকে শতাধিক মোটরসাইকেলের একটি বহর শহর প্রদক্ষিণ করে সদর উপজেলার শাহবাজপুরের দিকে চলে যায়। উভয় পক্ষের মহড়ায় ওই দুই প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান শোনা গেছে।

পাল্টাপাল্টি মহড়ার কারণে সড়কে গাড়িতে আটকা পড়া কয়েকজন যাত্রী বলেন, প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রায় রাতেই এ ধরনের মহড়া চলছে।

জানতে চাইলে মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো ঢাকায়। মোটরসাইকেল মহড়া হওয়ার কোনো কথা নয়। কে এই মহড়া দিয়েছে, আমি দেখছি।’
এদিকে সাংসদ রেজাউল করিমের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

জানতে চাইলে জামালপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাহী হাকিম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। তাঁদের চোখে এখনো তা পড়েনি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তাঁদের (নেতাদের) সতর্ক করা হয়েছিল। তাঁরা প্রাথমিক সতর্কতা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মসজিদে দোয়া ও ভোট প্রার্থনার অভিযোগ
মাদারীপুর-৩ (সদরের একাংশ ও কালকিনি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে গতকাল জুমার নামাজ শেষে মসজিদে মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও নৌকায় ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার থেকে এলাকায় রয়েছেন আবদুস সোবহান। গতকাল সকালে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাদের কবর জিয়ারত করেন। অনেকের বাড়িতে গিয়ে তিনি কুশল বিনিময় করেন। পরে তিনি কালকিনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি বাঁশগাড়ি ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

কালকিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী আর আমি একসাথে মসজিদে নামাজ পড়েছি। গোলাপ নামাজ শেষে দোয়া চান। এরপর তিনি নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় আমিসহ অনেকেই এর প্রতিবাদ করে মসজিদ থেকে বাইরে চলে আসি। গোলাপ গত মঙ্গলবার থেকে এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা ও ভোট প্রার্থনা করছেন। এসব বিষয়ে আমরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি।’

জানতে চাইলে আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এলাকায় আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত যাঁরা আছেন, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দোয়া চাচ্ছি ও পরিচিত হচ্ছি। চা খাচ্ছি। আচরণবিধিতে এসবের তো কোনো নিষেধ নেই। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গেলে পথে দু-একজনের সঙ্গে দেখা হলে কুশল বিনিময় করছি। তবে আমরা কোনো নিয়মভঙ্গ করছি না।’ মোটরসাইকেল বহর ও মসজিদে ভোট চাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মসজিদে ভোটারদের কাছে ভোট চাইনি, দোয়া চেয়েছি। এলাকায় এখনো আমরা গণসংযোগ করছি না। আর বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। তারাও তো গণসংযোগ, শোডাউন করছে।’

জেলা নির্বাচন কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘ভোটের ২১ দিন আগে কোনো প্রার্থী ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়া, দোয়া ও গণসংযোগ কিছুই করতে পারবেন না। বিধিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা আছে। যাঁরা নিয়ম ভঙ্গ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন। তাঁদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে হবে।’

কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তৎপর রয়েছি। নির্বাচনী নিয়মভঙ্গের বিষয় নিয়ে এখনো কোনো প্রার্থী আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’