আ.লীগে ভাতিজা, বিএনপিতে চাচা

বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় দুটি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে কক্সবাজার-২ সংসদীয় আসন। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে লড়ছেন চাচা-ভাতিজা। তাঁরা হলেন বিএনপির আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ ও তাঁর ভাতিজা আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। অবশ্য সবকিছুই নির্ভর করছে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদের ওপর। তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকলে হিসাব পাল্টে যাবে।
এ আসনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের আরও নয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরাও গত বুধবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার হাতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ আসনে ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামবেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আজাদ। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি (আজাদ) ১৭ হাজার ২৭ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনসারুল করিমকে পরাজিত করে এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি জোটের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। তাঁর বাড়ি কুতুবদিয়ায়।
জামায়াতের আরেক নেতা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় হামিদুর রহমান আজাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় তাঁকে দুই মাসের সাজা দেন আদালত। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দী আছেন। আগামী ৫ ডিসেম্বর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানা গেছে।
হাইকোর্টের এক আদেশে বলা হয়, সংবিধান অনুসারে দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে সেই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেও দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দলগত সিদ্ধান্ত মতে চারটি আসনে বিএনপির চারজন প্রার্থী গত বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে কক্সবাজার-২ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
অন্যদিকে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী ৮ ডিসেম্বর জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত দেবে—এ আসনে নির্বাচন করবেন কে, হামিদুর রহমান আজাদ নাকি আলমগীর ফরিদ।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, এ আসনে আলমগীর ফরিদ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিরাজুল মোস্তফাকে ১২ হাজার ২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৪৪৫ ভোট। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে ৫৪ হাজার ৩১৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে দ্বিতীয়বার সাংসদ নির্বাচিত হন বিএনপির আলমগীর ফরিদ। তখন তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩ হাজার ৫০৩ ভোট।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আশেক উল্লাহ রফিক। কিন্তু দলের অপরপ্রার্থী আনসারুল করিম স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। পরে ত্রুটিজনিত কারণে আনসারুল করিমের মনোনয়নপত্র বাতিল হলে আশেক উল্লাহ বিনাপ্রতিন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তরুণ রাজনীতিক আশেক উল্লাহ রফিক। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনিও গত বুধবার দুপুরে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি বিএনপি প্রার্থী আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের ভাতিজা। আশেক উল্লাহ রফিকের মরহুম বাবা অ্যাডভোকেট রফিক উল্লাহ ও বিএনপির প্রার্থী আলমগীর ফরিদ সম্পর্কে আপন জেঠাতো ভাই।
প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই প্রার্থী চাচা-ভাতিজা একই পরিবারের সদস্য হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দুই প্রার্থীর বাড়িও মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী গ্রামে।
আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, নির্বাচন নিয়ে এ মুহূর্তে কথা বলা মুশকিল। আগামী ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর বলা যাবে—কার সাথে কার লড়াই হচ্ছে।